সারা বাংলা

বাগেরহাটে বাড়ছে বৃষ্টি, বাড়ছে আতঙ্ক 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাবে বাগেরহাটসহ উপকূলীয় অঞ্চলে থেমে থেমে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে বৃষ্টির পরিমাণ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদের দেখা মেলেনি। সময় যতো গড়াচ্ছে ততই যেন বেড়ে চলেছে ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাব।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। সকল সমুদ্রবন্দরকে  ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত  দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঝড়টি এই মুহূর্তে মোংলা বন্দর থেকে ৪৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে যেকোন সময় ঝড়টি আঘাত হানতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড় দানা আঘাত হানার খবরে এবারও জান-মাল হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন নাজুক বেড়িবাঁধসংলগ্ন ও বেড়িবাঁধ না থাকা এলাকার মানুষ। জলোচ্ছ্বাস হলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের জীবনেরও ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

রামপাল উপজেলার রোমজাইপুর গ্রামের মো. তুহিন বলেন, আমাদের এলাকায় কোন বেড়িবাঁধ নেই। বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারে বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করে। ঝড়ে কি হবে জানি না, আশ্রয় কেন্দ্রও অনেক দূরে।

রামপালের পেরিখালী ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য হেনা বেগম বলেন, রামপালে ও মোংলা উপজেলার বেশিরভাগ অংশ বেড়িবাঁধের বাইরে। যেকোন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এই এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দানার খবরে সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরাও মানুষকে সচেতন করছি। যাতে মানুষের জান মালের ক্ষতি কম হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বেরুনী বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও ব্লক প্রস্তুত আছে। বিভিন্ন পোল্ডারের বাঁধগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ৩৫/১ পোল্ডারের বাঁধে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী অংশে ৫শ মিটারের মত ঝূঁকিপূর্ণ রয়েছে। প্রয়োজনে জরুরী মেরামত করা হবে। এছাড়া মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালের বেশকিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই। তাদেরও সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে বৃষ্টিতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। রহিম নামের এক রিকশাচালক বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি তাই রাস্তায় তেমন লোক নাই। মাত্র ৭০ টাকা আয় করেছি। রাতে নাকি বড় ঝড় হবে। কি খেয়ে বাঁচব তা জানি না।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জরুরী সভা করেছে জেলা প্রশাসন। উপকূলের মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলায় ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ৮০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া শিশুখাদ্য জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা নগদ বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। আপদকালীন মানুষদের সহযোগিতার জন্য ৩ হাজার৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছে। ৮৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জরুরী সভা করেছি। জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা ও দূর্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও গর্ভবতী নারীদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। গবাদি পশু ও মাছের ঘেরগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। সবাইকে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নির্দেষ মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

ঘূর্ণিঝড় দানার খবরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিদেশি জাহাজ ও সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষার জন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এখন পর্যন্ত বন্দরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড ও গণসংযোগ বিভাগের উপ-সচিব মো. মাকরুজ্জামান।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানার খবর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জাহাজগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দরে এখন নিজস্ব ১ নম্বর এলার্ট চলছে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সংকেত তিন পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।