নোয়াখালী জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিনকে বিগত স্বৈরাচার সরকারের দোসর ও দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে তার অপসারণ দাবি জানিয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নোয়াখালী খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিনকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ও দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে বক্তারা বলেন, তিনি ২০১৯ সালের ১৭ আগস্ট নোয়াখালী জেলায় যোগদান করার পর থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খেলাধুলার বিভিন্ন সরঞ্জাম এলেও তা তিনি সঠিকভাবে বিতরণ করতেন না।
তা ছাড়া তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে বিভিন্ন জাতীয় দিবসের ক্রীড়া বাবদ বরাদ্দ আত্মসাৎ করতেন। বিগত সরকারের সময় জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য বরাদ্দকৃত টাকাও তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার দুর্নীতিগ্রস্ত একজন কর্মকর্তা ও তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যোগসাজসে আত্মসাৎ করতেন।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকার গঠন হওয়ার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দেশের সকল জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিলুপ্ত করে। একই সাথে সাত সদস্য বিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রেরণ করে। সেই কমিটিতে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক আহ্বায়ক ও জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা সদস্য সচিব হবেন।
নোয়াখালী জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জেলা প্রশাসনের দোহায় দিয়ে ভেঙে দেওয়া বিগত জেলা ক্রীড়া সংস্থার কিছু কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করে। জেলা প্রশাসক তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রেরণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, কমিটিতে তিনি বিগত জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তার পছন্দ মতো নাম বসিয়েছেন। আকবর হোসেন রিদন নামে যে ব্যক্তির নাম তিনি তালিকায় দিয়েছেন তার বাড়ি পার্শ্ববর্তী লক্ষীপুর জেলায়। জনপ্রিয় খেলা ফুটবল অথবা ক্রিকেটকে বাদ দিয়ে তিনি নূর মোহাম্মদ রকি নামে একজনকে উৎকোচের বিনিময়ে কারাতে রেফারি হিসেবে সদস্য তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য নাম প্রেরণ করেছেন।
এ ছাড়া গোলাম জিলানী দিদার নামে একজন ব্যক্তির নাম তিনি তালিকায় রেখেছেন, যাকে নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৎকালীন নেতাদের সাথে আঁতাত করে বিপুল টাকা কামিয়েছেন। তা ছাড়া তিনি কোনো সময় কোনো খেলার সাথে জড়িত ছিলেন না। তিনি জেলায় একজন বির্তকিত ব্যক্তি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রীড়া সংগঠক ও খোলোয়াড়বৃন্দ দেখা করেছেন।
ক্রীড়া সংগঠক সাজেদুল আলম দিপু বলেন, ‘জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা একজন দুর্নীতিবাজ। তিনি বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের খেলার জন্য পাওয়া বরাদ্দ নয়ছয় করেন। তাছাড়া তিনি এখনো বিগত সরকারের দোসরদের নিয়ন্ত্রিত।’
ফুটবল রেফারি শাহেদুর রহমান বলেন, ‘বিগত সরকার প্রধানের পরিবারের নামে বিভিন্ন ব্যক্তির টুর্নামেন্ট-গুলোতে আমাদের ঠিক মতো পেমেন্ট দিতেন না। জিজ্ঞেস করলে বলতেন বরাদ্দ কম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন পর্যায়ের খেলোয়াড়রা বলেন, ‘জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তাকে সব সময় দেখতাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার দুয়েকজন কর্মকর্তার সাথে। তিনি অন্য কারো সাথে তেমন মিশতেন না ও অন্য কাউকে পাত্তাও দিতেন না।’
এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘কারা মানববন্ধ করেছে আমি জানি না। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেখভালো করেছেন। আমি শুধু জমাকৃত সিভিগুলো দিয়েছি।’