সারা বাংলা

গোমতীর চরে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

আকস্মিক বন্যায় সব হারানো কুমিল্লার গোমতী চরের কৃষকরা আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে শীত মৌসুমকে সামনে রেখে নানারকম সবজি চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান তারা।

কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতী কটক বাজার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস হয়ে দাউদকান্দির সাপটা মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষাকালে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে বিপুল পরিমাণ পলি বহন করে উর্বর করে গোমতীর চরাঞ্চল। সেই উর্বর জমিতে চাষিরা ধান, গম, ভুট্টা, ইক্ষু, পাট, আলু, নানা জাতের শাকসবজিসহ শীতকালীন বিভিন্ন তরিতরকারি উৎপন্ন করে আসছেন বছরের পর বছর ধরে।

সীমান্তের ওপারে ভারত নদীতে একাধিক বাঁধ দেওয়ায় নদীটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই অতিমাত্রায় পানি কম থাকে। এতে বিগত বছরগুলোতে নদীর তীরের কৃষকরা নিশ্চিন্ত মনে বারো মাসই বিভিন্ন প্রকারের ফসল উৎপাদন করে আসছিলেন। চলতি বছর অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে গোমতীর দুই কূল ছাপিয়ে যায় পানিতে। এতে চরের পুরো অংশ পানিতে তলিয়ে গেলে সর্বস্বান্ত হয় কৃষক। পরবর্তীতে পানি নেমে গেলে ভাগ্য ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নদীর তীরের কৃষকরা। তারা আগাম ও দ্রুত ফলনশীল সবজি উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েন। চাষ করেন লালশাক, ডাঁটা শাক, পুঁই শাক, মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি।

শীত মৌসুমকে সামনে রেখে সবজি চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান কৃষকরা

সরেজমিনে গোমতীর সদরের আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, কাইচ্চাতলী বুড়িচংয়ের সমেষপুর, বাগিলারা, বাজেবাহেরচর, ভান্তি, পূর্বহুরা, বালিখাড়া, কামাড়খাড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর দৃশ্য। চাষাবাদে ব্যস্ত নান্টু নামের একজন কৃষক জানান, সরকারি পর্যায়ে কেউই কোনো খবর রাখেনি বা নিতে আসেনি। বন্যা পরবর্তীতে মাঠ চাষাবাদের উপযোগী করে গত প্রায় ১৫ দিন আগে তিনি চরের ১০ একরেরও বেশি জমিতে মুলা চাষ করেছেন। কিছু অংশে করেছেন লালশাক ও ডাঁটা শাক। এরই মাঝে তার আবাদ করা মুলা ও লালশাক বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠেছে। এছাড়া জমি তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে, কয়েক দিনের মধ্যেই আলু রোপণ করবেন।

আমতলী, নিশ্চিন্তপুর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর, শাহ আলম, রুবেল, হালিম, আব্দুল জানান, এ মৌসুমে প্রায় ২০ একরের বেশি জমিতে তারা সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। একই দৃশ্য বুড়িচং অংশের চরের। সেখানেও কৃষকরা ব্যস্ত লাল শাক, ডাঁটা শাক, মুলা চাষে। কৃষক মালু মিয়া বলেন, শাক, মুলা দ্রুত বর্ধনশীল তথা অল্প সময়ে বিক্রিয় উপযোগী হয়ে ওঠায় বন্যা পরবর্তী চাষিরা প্রাথমিক লাভের আশায় চরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এসব তরকারির চাষ করেছেন।

স্থানীয় কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন, ‘সরকার কৃষকদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করলেও আমাদের আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, কাইচ্চাতলী এলাকার চরাঞ্চলের কয়েকশ একর জমি চাষাবাদ করা কৃষকদের জন্য কখনও কোনো সরকারি প্রণোদনা বা সাহায্য পাইনি।’

চরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তরকারির চাষ করেছেন কৃষকরা

বন্যাপরবর্তী গোমতীর চরের কৃষকদের অবস্থা জানতে চাইলে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি বন্যায় গোমতীর চরের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কৃষকরা বন্যা পরবর্তী দ্রুততম সময়ে চরে শাকসবজির আবাদ শুরু করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।