মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর তীরের কালারবাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাশয় ভরাটের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি ইজারা গ্রহণের অজুহাত দেখিয়ে পানিউন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৪ বিঘা জলাশয় ভরাট করে এখন স্থাপনা নির্মাণ করতে চায় একটি মহল। ভরাট করা ওই জমির মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। জমির মালিকানা দাবি করে ইতোমধ্যে রাস্তার পাশে থাকা টং দোকানির কাছ থেকে মাসিক ভাড়া আদায় করছে তারা।
এদিকে জলাশয় ভরাটের বিষয়টি সার্ভে করে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কালারবাজারে পাউবো’র জলাশয় ভরাট করে রাখা হয়েছে প্রায় ৪ বিঘাজমি। স্থানীয় ও নদীর অপর পারের বালাগঞ্জ উপজেলার ৫ ব্যক্তি এসব জলাশয় ভরাট করেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
কাউয়াদিঘী হাওরে উন্নত কৃষি ব্যবস্থা বাড়াতে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সর্ব-বৃহত্তম সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক হাওর কাউয়াদীঘি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার ২২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করতে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে এবং এটি শেষ হয় ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে হলদিগুল হয়ে কালারবাজার-খেয়াঘাটবাজার থেকে মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট এলাকা পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার হাওর বেষ্টিত ও নদীর কিনারায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়। মূলত কুশিয়ারা ও মনু নদের জলের কবল থেকে কাউয়াদিঘী হাওর রক্ষাসহ মনু ব্যারেজ দিয়ে শুস্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ করতে প্রায় ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে পাউবো। ওই সময়ে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করে কালারবাজারসহ অন্যান্য জলাশয় থেকে মাটি উত্তোলন করে ৪৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এখন পরিত্যক্ত এসব জলাশয় দিনদিন বেদখলে যাচ্ছে।
স্থানীয় উত্তরভাগ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও কালারবাজারের ব্যবসায়ী মজনুর রহমান বলেন, বাজারে জমি ভরাটকারীগণ কিভাবে ইজারা এনেছেন ও কিভাবে ভরাট করছেন তা আমরা জানি না। এটি ইজারা নাকি তাদের নিজেদের জলাশয় তাও আমার জানা নাই।
জলাশয় ভরাটকারী নদীর ওপারের বালাগঞ্জ উপজেলার ডেকাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কালারবাজারের ব্যবসায়ী সাদেক মিয়া বলেন, ভরাটের বিষয়ে আমরা সঠিক রয়েছি। আইনি প্রক্রিয়ায় আজ থেকে ২৫ বছর পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে থেকে জলাশয় এনে এখন মাটি ভরাট করেছি।
বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন’র (বাপা) জাতীয় পরিষদ’র সদস্য আ.স.ম সালেহ সোহেল বলেন, অবৈধভাবে যারা পাউবোর জলাশয় দখল করেছেন, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় আনা হউক। তিনি বলেন, যত্রতত্র জমিদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে পরিবেশ ও প্রকৃতির মারাত্মক সমস্যা হবে।
পানি উন্নয় বোর্ড’র রাজনগর উপ-সহকারি প্রকৌশলী আল আমিন বলেন, বহু আগে “জমির শ্রেণির পরিবর্তন করা যাবে না” এমন শর্তে মাত্র ৩ বছরের জন্য জলাশয় ইজারা দেওয়া হতো। পরবর্তীতে ২০১৪ সাল থেকে ইজারা দেওয়া বন্ধ করা হয়।
তিনি বলেন, যারা বলেন, ৯৯ বছরের জন্য পাউবো’র কাছ থেকে বন্দোবস্ত এনেছি, তাদের প্রমাণাদি দেখাতে বললে আর দেখাতে পারেন না।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, কালারবাজারে আমাদের জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে সরেজমিনে আমাদের লোকজন পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, এখানে জলাশয় আমাদের আছে, তাদেরও থাকতে পারে। আমরা জমি সার্ভে করে আমাদের ভূমি বের করে “ডিমাগ্রেশন”সহ ভরাটকারীদের চিঠি দেবো। যাতে তাদের ভরাটকৃত মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়। এই চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে আমরা প্রেরণ করে আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো।