সারা বাংলা

দিনমজুর থেকে শত কোটি টাকার মালিক যুবলীগ নেতা বেলাল

দিনমজুর থেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা যুবলীগ নেতা বেলাল উদ্দীন। প্রায় ১৬ বছর আগে গঠন করা একটি সমিতির সভাপতি পদে বসে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তিনি এসব করেছেন বলে অভিযোগ।

বেলাল উদ্দীন ঠাকুরগাঁও উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এবং ঠাকুরগাঁও গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে মুখ খোলা শুরু করেছেন স্থানীয়রা। এসব ঘটনায় বেলালের বিরুদ্ধে বালিয়াডাঙ্গী থানায় মামলা ও ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কার্যালয়ের একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক কর্মচারী বেলাল উদ্দীন অভিযোগ করেন, সমিতির সদস্য ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, চেক জালিয়াতি, জমি দখল, সমিতির টাকায় সুদের ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন যুবলীগ নেতা বেলাল। আর সবই করেছেন স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে।

তিনি বলেন, ‘সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দীনের অপকর্ম মেনে নিতে না পাড়ায় আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চলে আসার দিন সকল হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে আসি। এর কয়েকদিন পর দাবি করা হয়, আমার কাছে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাবেন তিনি। পরে জায়গা-জমি বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। চাকরি নেওয়ার সময় জমা দেওয়া ব্ল্যাংক চেক ফেরত চাইলেও দেয়নি। পরবর্তীতে আমার বিরুদ্ধে ৪৩ লাখ টাকার তিনটি চেক ডিস অনার মামলা দেওয়া হয়।’

যুবলীগ নেতা বেলাল উদ্দীনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর গ্রামে। এলাকাবাসী জানান, এক সময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন তিনি। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সেই সমিতির সভাপতি পদে কখনো নিজে, কখনো বাবাকে, আবার কখনো স্ত্রীকে বসিয়েছেন। নিজের পরিবারের সদস্য ও পছন্দের লোকদের নিয়ে গঠন করেছেন ব্যবস্থাপনা কমিটি। সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের ফাঁদে ফেলে জালিয়াতির আশ্রয়ে করে গেছেন একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতা।

লাহিড়ী বাজার এলাকার রেদোয়ান নামে ভুক্তভোগী এক যুবক বলেন, ‘গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেই। জামানত হিসেবে একটা ব্ল্যাংক চেক জমা দেই। সুদসহ ঋণ পরিশোধ করার পর চেক ফেরত চাইলে জানায়, চেক হারিয়ে গেছে। পরবর্তীতে আমার নামে ৫৮ লাখ ৩০ হাজার টাকার চেক ডিস অনার মামলা দেওয়া হয়।’

একই এলাকার বদরুল আলম নামে একজন বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেই। নির্ধারিত সময়ের আগেই ঋণ পরিশোধের চাপ দেওয়া হয়। টাকা দিতে না পারায় আমার বিরুদ্ধে ৯ লাখ টাকার মামলা দেন বেলাল উদ্দীন। পরবর্তীতে মীমাংসায় বসলে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘বেলাল উদ্দীন কখনো নিজে সভাপতি পদে, কখনো বাবাকে; আবার কখনো স্ত্রীকে সেই পদে বসিয়ে দুর্নীতি করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল। তাই এতদিন কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি।’

ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলা সমবায় কার্যালয়ের আওতায় পাঁচটি উপজেলায় ৮৬২টি সমবায় সমিতি রয়েছে। এর মধ্যে, গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতিসহ ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ৭৭টি।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরসহ বিগত অর্থবছরের গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের অডিট প্রতিবেদনে সমিতির হিসেবে যথেষ্ট গড়মিল রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বেলাল উদ্দীন বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা।’

ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপ-সহকারী নিবন্ধক এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি বেলাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকারিয়া মন্ডল মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।