সারা বাংলা

রাজশাহী শহরে তীব্র যানজট মোকাবিলায় পুলিশের ৬ নির্দেশনা

রাজশাহী নগরজুড়ে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ শহরে গণপরিবহন বলতে শুধু রিকশা ও অটোরিকশা। এই রিকশা-অটোরিকশার চাপেই সড়কে সময় নষ্ট হচ্ছে নগরবাসীর। এ অবস্থায় রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। এ যানজট নিয়ন্ত্রণে ছয়টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আগে শহরের সাহেববাজার ও এর আশপাশের এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও যানজট তেমন ছিল না। শহরের চারটি পয়েন্টে রেললাইনের ওপর দিয়ে উড়ালসড়ক নির্মাণ করছে সিটি করপোরেশন। ফলে, একটি সড়কের কোথাও একেবারে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, আবার কোথাও রিকশা-অটোরিকশা চলছে সংকীর্ণ পথ দিয়ে। অনেক যানবাহন আবার বিকল্প সড়ক বেছে নিচ্ছে। ফলে, শহরের মোড়ে মোড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।

শহরজুড়ে যানজটের অন্যতম কারণ একসঙ্গে অতিরিক্ত রিকশা-অটোরিকশা রাস্তায় নেমে যাওয়া। শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে আগে অটোরিকশাগুলোকে মেরুন ও সবুজ রং করে দেওয়া হয়েছিল। কোন রঙের অটোরিকশা কখন চলবে, তার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে সব অটোরিকশাই একসঙ্গে সড়কে চলাচল শুরু করে। এতে অটোরিকশার অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। আবার উড়ালসড়কের কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সড়ক বন্ধ রয়েছে। ফলে, দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম জোহা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, সাংবাদিক ও লেখক সরদার আবদুর রহমান, হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান লাভলু, গণতন্ত্র মঞ্চ রাজশাহীর বিভাগীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, পরিবেশকর্মী নাজমুল হোসেন রাজুসহ নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। পুলিশ কমিশনার সেদিন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি পরিস্থিতি দেখতে শুক্রবার তিনি নিজেই মাঠে নামবেন বলে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার তিনি শহর ঘুরে দেখেন।

এদিন নগরের সাহেববাজার এলাকায় আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং রাজশাহীর সিনিয়র সিটিজেনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি ও যানজট নিরসনের বিভিন্ন দিক নিয়ে উপস্থিত সকলে তাদের মতামত দেন।

পরে আরএমপি কমিশনার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, রাজশাহী শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। পাশাপাশি, ফুটপাত ব্যবসায়ীরা যেন শৃঙ্খলা মেনে ব্যবসা করতে পারেন এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকে, সেটিরও সুস্পষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে।

পরে সন্ধ্যায় নগর পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নগরের যানজট নিয়ন্ত্রণে ছয়টি নির্দেশনা নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো:

১। শহরের মূল সড়কের দুই পাশে এবং শপিং মলের সামনে কোনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। ২। সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনের খালি জায়গা শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার হবে, কোনো হকার থাকবে না।

৩। সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট থেকে গণক পাড়া মোড় পর্যন্ত রাস্তার ডান পাশে ভ্রাম্যমাণ হকার বা দোকান বসতে পারবে।

৪। সোনাদিঘি মসজিদ মোড় থেকে সমবায় মার্কেট রোড হয়ে আনাস মঞ্জিল থেকে বামদিকে গণক পাড়া মোড় পর্যন্ত শুধু একমুখী যানবাহন চলাচল করবে।

৫। মালোপাডা সড়ক থেকে সমবায় মার্কেট রোড সংযোগ সড়ক (বিএনপি অফিস ও ভুবন মোহন পার্কের পাশের রাস্তায়) একমুখী যানবাহন চলাচল করবে।

৬। গণক পাড়া মোড় থেকে কোনো গাড়ি সাহেববাজার জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে পাববে না। সাহেববাজারমুখী গাড়িগুলো গণক পাড়া রোড দিয়ে ঘুরে যাবে।

এসব নির্দেশনা মেনে চলতে শহরবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আরএমপির ট্রাফিক পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানানো হয়েছে।