নরসিংদীর শিবপুরে ট্রাক ও সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী ও চালক ছিলেন।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে শিবপুর উপজেলার মনোহরদী-শিবপুর-ইটাখোলা আঞ্চলিক সড়কের শিবপুর পঁচারবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদের একজন মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী। তিনি নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক ছিলেন। পড়ানোর পর বাসায় ফিরছিলেন তিনি। পথে বিদায় হলো তার।
নরসিংদী সদর হাসপাতালে আবু বক্কর সিদ্দিকীর ভাই মো. তোফাজ্জল আহাজারি করে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন বড় ভাই। তার জন্যই সংসারটা টিকে আছে। সংসারের ভরণ-পোষণ, খরচ সবকিছু একাই সামাল দিতেন। এখন আমরা কী করব, তার ছেলে-মেয়ের কী হবে, বাসায় গিয়ে ভাবীকে কী জবাব দেব’?
সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘স্যার আমাদের খুব প্রিয় ছিলেন। আমাদের একজন অভিভাবককে হারালাম। এটা কখনোই মেনে নিতে পারছি না। দুই দিন আগেও স্যার কলেজে লেকচার দিয়েছেন। কল্পনারও বাইরে স্যার আমাদের মাঝে নেই। এমন সড়ক দুর্ঘটনা কখনোই কাম্য নয়।’
শিবপুর মডেল থানা ওসি আফজাল হোসেন বলেন, ‘বাসচালককে আটক করতে পারিনি। মৃতদেহগুলো নরসিংদী সদর হাসপাতালে রয়েছে। ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকিদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে একজন নরসিংদী সরকারি কলেজের প্রভাষক রয়েছেন। তার পরিবারের লোকজনও এসেছিলেন থানায়।’
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, নরসিংদীর মনোহরদী থেকে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে ইটাখোলা-মঠখোলা আঞ্চলিক সড়ক ধরে শিবপুরের ইটাখোলার দিকে যাচ্ছিল একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সেটি শিবপুরের চক্রধা ইউনিয়নের পচারবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মনোহরদীগামী সিমেন্টবাহী একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সিএসজিচালিত অটোরিকশাচালক ও পাঁচজন যাত্রী। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন-মনোহরদী উপজেলার মারুফা (২৩), শিবপুরের বৈলাব এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক (৪০), শিবপুরের সাতপাড়া এলাকার সিএনজি চালক শাহিন (৩৫) এবং রায়পুরার মির্জারচর এলাকার মোস্তফা (৪৮)।
আবু বক্কর সিদ্দিক নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। অন্য দুইজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
শিবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর আসছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট চত্বরে দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে মো. নজরুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। গত ১ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় যাত্রীবাহী বাসচাপায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাউশিয়া পাখির মোড় এলাকায় কুমিল্লামুখী সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গত ৮ জুলাই নরসিংদী শিবপুরে বাসচাপায় মেহেদী হাসান (২০) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। গত ১৭ মে পিরোজপুরে বাসচাপায় পরিতোষ রায় (৫০) নামের এক যুবলীগকর্মীর মৃত্যু হয়।পিরোজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহসড়কের রুহিতলা বুনিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। গত ১৯ এপ্রিল সকাল ১০টায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সামনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে নিরাপত্তা বাউন্ডারি ভেঙে রাইদা পরিবহনের একটি বাস ঢুকে যায়।এ ঘটনায় মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকী নামের সিভিল এভিয়েশনের একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিহত হন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে বাসচাপায় চায়না বেগম (৪৮) ও শাকিব মিয়া (১৯) মোটরসাইকেল আরোহী মা-ছেলে নিহত হন। এছাড়া ঢাকার প্রগতি স্মরণির মধ্যবাড্ডায় গত ৯ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন চব্বিশ বছরের তরুণী বেসরকারি চাকরিজীবী তাসনিম জাহান আইরিন। আহত হন তার বড় বোন নুসরাত জাহান জেরিন, বয়স ২৮ বছর।