সারা বাংলা

খুলনার ৬ পয়েন্টে ‘বিনা লাভের দোকান’, ক্রেতাদের স্বস্তি

খুলনায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ‘বিনা লাভের দোকান’ দিয়ে মডেল স্থাপন করেছে শিক্ষার্থীরা। একটি থেকে দোকানের সংখ্যা বেড়েছে ছয়টিতে। স্বল্পমূল্যে কোন লাভ ছাড়াই পণ্য বিক্রি করছে শিক্ষার্থীরা। ফলে এসব পয়েন্ট থেকে পণ্য ক্রয় করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ক্রেতারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নগরীর শিববাড়ি ও গল্লামারিসহ ছয়টি পয়েন্টে রোববার থেকে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।

এর আগে শিববাড়ি মোড়ের একটি পয়েন্ট দিয়ে এ কার্যক্রম চালু হলে ব্যাপক সাড়া পড়ে। 

রোববার (২৭ অক্টোবর) নগরীর শিববাড়ী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাটির ওপর ত্রিপল ও বস্তা বিছিয়ে আলু, পেঁয়াজ, সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন কয়েকজন যুবক। তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। পাশে থাকা ব্যানারে লেখা– ‘বিনা লাভের দোকান’, আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা। সেখান থেকে বেশ আগ্রহ নিয়ে জিনিসপত্র কিনছেন লোকজন। 

বিক্রেতারা জানান, এখানে ৯ ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে কোনো লাভ ছাড়াই। প্রতি কেজি মসুর ডাল ১০৫ টাকা, আলু ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ৭৫ টাকা, রসুন ২১৫ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, লালশাক ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫০ টাকায় মিলছে।

কিছুক্ষণ পর একটি পিকআপে করে আরও কিছু পণ্য নিয়ে সেখানে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী। তিনি জানান, শুধু শিববাড়ী মোড়ই নয়; বয়রা বাজার, নতুন বাজার, গল্লামারী হল রোড, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড, খালিশপুর চিত্রালী মার্কেটেও চালু করা হয়েছে এ রকম ‘বিনা লাভের দোকান’। বাজারের চেয়ে কম দরে এখান থেকে ক্রেতারা প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছেন। 

তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে ছয়টি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই দোকান চালু থাকবে। 

তিনি আরও জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূলত বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সে কারণে আমরা কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে ক্রেতাদের সরাসরি সমন্বয় ঘটিয়ে দিচ্ছি। শিগগির নগরীর ৩১টি ওয়ার্ড ও খুলনার ৯ উপজেলায় এই দোকান চালু করা হবে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি এখানে এসে বিক্রি করতে পারবেন।

গাড়িচালক মো. বেলাল হোসেন বলেন, বাজারের চেয়ে এখানে দাম কম। আলু বাজারে ৬০ টাকা, এখানে ৫৫ টাকা। পেঁয়াজ বাজারে ১১০ টাকা, এখানে ৭৫ টাকা। ডাল বাজারে ১৩০ টাকা, এখানে ১০৫ টাকা। পটোল বাজারে ৬০ টাকা, এখানে ৪০ টাকা। শিক্ষার্থীরা ভালো একটা উদ্যোগ নিয়েছেন।

ইজিবাইকের চালক আলমগীর হোসেন বলেন, যাওয়ার সময় লোকের ভিড় দেখে এখানে আসলাম। পেঁয়াজ, আলু, ডাল ও রসুন কিনেছি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুবই ভালো হয়েছে। তবে আরও কিছু পণ্য এবং বিক্রির পয়েন্ট বাড়ালে ভালো হবে।

নগরীর বয়রা বাজার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিনা লাভের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য কিনছেন। 

রিকশাচালক জয়নাল শেখ বলেন, বাজারের চেয়ে কম দামে পেয়ে শাকসবজি কিনেছি।

এখানে বিক্রির দায়িত্বে থাকা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র আহসানুল হাসান তানিম বলেন, আমরা নিজেরা টাকা দিয়ে পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছি। কারও কাছ থেকে কোনো অনুদান নিইনি। এই পয়েন্টে ২০০ কেজি আলু, ২০০ কেজি ডাল, ৫০ কেজি রসুন, ১০০ কেজি পেঁয়াজ, ২৫ কেজি মরিচ এনেছিলাম। সবই বিক্রি হয়ে গেছে। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বাজারের চেয়ে প্রতিটি পণ্য অনেক কম দামে বিক্রি করছি। ডিমসহ আরও কিছু পণ্য বিক্রির চিন্তাভাবনা আছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক মুহিবুল্লাহ মুহিব বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। যতদিন বাজার স্থিতিশীল না হচ্ছে, ততদিন আমাদের কার্যক্রম চলবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৮ অক্টোবর সীমিত পরিসরে নগরীর শিববাড়ী মোড়ে এই দোকান বসানো হয়েছিল। ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া দেখে রোববার থেকে প্রতিদিন ছয়টি পয়েন্টে এই দোকান চালু করা হয়েছে।