সারা বাংলা

আ.লীগের লগি-বৈঠা কর্মসূচির ১৮ বছর, বিচার চেয়ে জামায়াতের বিক্ষোভ

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় লগি-বৈঠা কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ। একে ঘিরে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে জামায়াত ও শিবিরসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা ছিলেন। সেই ঘটনা নিয়ে জামায়াত বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছে, মামলাও করেছিল। তবে এতদিন তাতে গতি ছিল না। 

লগি-বৈঠা কর্মসূচির ১৮ বছর পর ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই হতাহতের ঘটনার বিচার চেয়ে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে জামায়াত। তারা ওই ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন। 

সোমবার (২৮ অক্টোবর) পাবনা, পিরোজপুর পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নড়াইল, খাগড়াছড়ি ও নাটের জেলায় বিক্ষোভ করে দলটির নেতাকর্মীরা। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-

পাবনা:  পাবনার বেড়ায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। দলটির বেড়া উপজেলা ও করমজা ইউনিয়ম শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ও জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য ডা. আব্দুল বাসেত খান। বেড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মো. আতাউর রহমানের সভপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী আবু সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

বক্তরা বলেন- ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা জামায়াতের সমাবেশে হামলা চালিয়েছিল। তারা লগি-বৈঠা নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ওপর হামলা করে। এই হামলার হুকুমদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সমাবেশের আগে বিক্ষোভ মিছিল বেড়া পৌর সদরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশে শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামদ-নাত পরিবেশন করেন ইসলামী সঙ্গীত শিল্পীরা।

পিরোজপুর: বিকেলে পিরোজপুরের টাউন ক্লাব মাঠে ২৮ অক্টোবর স্মরণে গণসমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী। কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও বরিশাল অঞ্চল টিম সদস্য এ কে এম ফখরুদ্দিন খান রাযী বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে এনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালে তার বিচার করতে হবে। গত ১৭ বছরে ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যার বিচার করতে হবে।’

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর ছেলে ও পিরোজপুর আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী। তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে মানুষ গুম করারা নেশা পেয়ে বসেছিল। এখন আমাদের জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে আনতে জনমত গঠন করতে হবে।’

অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর ছেলে ও ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখার নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রব, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখার সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জহিরুল হক প্রমুখ।

পঞ্চগড়: সোমবার বিকেলে পঞ্চগড় শের-ই-বাংলা পার্কের মুক্ত মঞ্চে সমাবেশের আয়োজন করে জেলা জামায়াত। এতে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‌‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেদিনের হামলায় অনেকে হতাহত হন। এরপর ভারতের মদদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় এসে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে আওয়ামী লীগ।’

পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা মফিজ উদ্দীনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জেলা তারবিয়াত সেক্রেটারি শাহিদ আল ইসলাম, জেলা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি জুলফিকার রহমান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী প্রমুখ।

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত সমাবেশে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের বিচার চেয়েছেন জামায়াতের নেতারা। একই সঙ্গে তারা জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনে আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্য দলটির কেন্দ্রীয় মজলিশ শুরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক আজিজুল রহমান স্বপন বলেন, ‌‘২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা কর্মসূচিতে হামলায় নিহত হন কুড়িগ্রামের রফিকুল ইসলামসহ সারাদেশে জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মী। এছাড়া, জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আবু সাঈদ ও মুগ্ধসহ অনেকেই। সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও তার দোসররা। তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

এসময় বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশ শুরা সদস্য সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক আজিজুল রহমান স্বপন, সাবেক জেলা আমির দেওয়ান আমিনুল ইসলাম, জেলা আমির আব্দুল মতিন ফারুকী, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট ইয়াছিন আলী সরকার, মজলিশ শুরা সদস্য জহুরুল ইসলাম, জেলা জামায়েতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল সরকার, ছাত্র শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম, ছাত্র শিবিরের জেলা শাখার সভাপতি মুকুল ইসলাম, ছাত্র শিবিরের জেলা সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন, শহর শাখার আমির আব্দুস সবুর খান, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা শাখার আমির ফয়েজ উদ্দিন প্রমুখ।

নড়াইল: আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় নড়াইল শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টিম সদস্য ও সাবেক নড়াইল জেলা আমির মাওলানা মির্জা আশেকে এলাহী।

মির্জা আশেকে এলাহী বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। আমরা সেদিনের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’ 

সভায় নড়াইলের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

খাগড়াছড়ি: জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ বলেছেন, ‌‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে জামায়াতের নেতাদের ওপর আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা দিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এর মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছিল। পরিকল্পিতভাবে বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে হেফাজতের উপর নৃশংসতা এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতা হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার বাংলার মাটিতে করতেই হবে।’

আজ বিকেল ৩টায় খাগড়াছড়ি টাউন হলে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খাগড়াছড়ি জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মোমেন।

নাটোর: নাটোর শহরের কানাইখালী পুরাতন বাস টার্মিনালে সমাবেশ করে জামায়াতের নেতারা। দলটির সদর থানা আমির মাওলানা মীর নুরুন্নবীর সভাপতিত্বে এবং শহর আমির মাওলানা রাশেদুল ইসলামের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আমির অধ্যাপক ড. মীর নুরুল ইসলাম।

ড. মীর নুরুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের পথ ধরেই আওয়ামী লীগ দেশে সন্ত্রাসী রাজনীতি শুরু করেছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। ২০০৬ সাল থেকেই দেশকে রাজনীতি শূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকারসহ মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি আফতাব আলী, জামায়াতের নাটোর শহর সেক্রেটারি অধ্যাপক ফজলুর রহমান, নলডাঙ্গা থানা আমির আব্দুর রব, নাটোর সদর থানা সেক্রেটারি মাওলানা হারুন অর-রশিদ, জামায়াত নেতা আলী আল মাসুদ মিলন ও শামসুল ইসলাম কল্লোল প্রমুখ।