সারা বাংলা

অনিশ্চয়তা কেটেছে, শুরু হচ্ছে কুণ্ডুবাড়ির মেলা 

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটায় ২২০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ির মেলা। মেলা চলবে ৩ দিন। তবে থাকবে না ইজারা প্রথা।

জানা গেছে, দুই পক্ষের অবস্থানের কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল মেলা আয়োজন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত কোর কমিটির সভায় মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। 

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তার জানান, এ বছর কুণ্ডুবাড়ির মেলা চলবে ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিয়োজিত থাকবে পুলিশ ও আনসার। এছাড়া ২৯ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ৫ দিন সেনাবাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্প থাকবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকেই কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা কুণ্ডুবাড়ির মেলায় ইজারার নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরও চলতি বছরও ইজাদার হিসেবে কালকিনির সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এসএম হানিফের চাচাতো ভাই আকবর সরদারকে ইজারা প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। একাংশ এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে। এরপরও আকবর সরদারকেই ইজারা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে করে ক্ষুব্ধ হয় স্থানীয়রা। পরে চাঁদাবাজি, জুয়া, যানজট, অশ্লীল নৃত্য, মাদক সেবনসহ নানা অভিযোগ এনে মেলা বন্ধের আবেদন করা হয় এবং ভুরঘাটা এলাকায় মেলা বন্ধ থাকবে মর্মে ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়। এরপর সমালোচনা শুরু হলে জেলা প্রশাসক জরুরী সভা ডেকে মেলা শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর কালীপূজাকে ঘিরে মাদারীপুরের কালকিনির ভুরঘাটা এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশেই অনুষ্ঠিত হয় এই কুণ্ডুবাড়ির মেলা। মেলার বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র এবং দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র বিক্রি হয়। 

স্থানীয়রা জানান, আগে ইজারাদারদের চাহিদা অনুযায়ী ১ সপ্তাহ মেলার অনুমোদন দেওয়া হলেও মেলা এক মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতো এবং মেলার অধিকাংশ স্টল থাকতো ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দুই পাশ জুড়ে। এতে করে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হতো। তবে এ বছর কুণ্ডুবাড়ি পূজার আয়োজক স্বপন কুণ্ডুর লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী মেলার অনুমতি দেয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোমবার থেকে পুলিশ ও প্রশাসনের নেতৃত্বে মেলার স্থলে মুজাহিদ কমিটি (চরমোনাইপন্থী) কর্তৃক স্থাপিত নেতিবাচক প্রচারণাসম্বলিত ব্যানারসমূহ অপসারণ করা হয়। মেলায় আয়োজক ও জেলা পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও মুজাহিদ কমিটির পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সেসব বিষয়গুলো মেলায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। 

কুণ্ডুবাড়ির কালি মন্দির কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি স্বপন কুণ্ডু বলেন, আমার আবেদনের ভিত্তিতে তিনদিনের জন্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই সবাই সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান উদযাপন করুক। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় আলেম ইমামুল ইসলাম বলেন, মেলাকে ঘিরে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণেই আপত্তি রয়েছে। এ জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসন ভেবে দেখবে। তবে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা করতে কোনো অসুবিধা নেই। 

জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তার আরও জানান, মেলায় কালকিনি পৌরসভার পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জেনারেটর ও সিসি ক্যামেরা দেওয়া হবে। এ খাতের নামে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি করা যাবে না। মেলার আশপাশে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম যেন না ঘটতে পারে সে বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।