প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছেন প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ। যার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন প্রাণ হারান। জাতিসংঘ ২০২১ সালে এই নীরব মহামারী মোকাবিলায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২৫ জুলাই দিনটিকে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেন।
এই উপলক্ষে কক্সবাজারে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) ‘বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে কক্সবাজারের সুগন্ধা বীচে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন। অনুষ্ঠানে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জীবন রক্ষার বিভিন্ন কৌশল জানতে বিপুল জনসমাগম ঘটে।
অনুষ্ঠানে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে সাঁতার প্রশিক্ষণ এবং লাইফগার্ড দলের প্রদর্শনী ছিল উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণ এবং তা প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
জেলা প্রশাসক সালাহ্উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, জনসচেতনতার মাধ্যমে এই ভয়াবহ সমস্যাটি মোকাবিলা করতে হবে। প্রতিটি মানুষের উচিত সাঁতার শেখা এবং নিরাপদ স্নানের পদ্ধতি জানা। দূর দূরান্ত থেকে কক্সবাজার বেড়াতে এসে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়লে হবে না। সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার সময় সূচি জানা দরকার, সাঁতার জানা, এবং সমুদ্রের কোন কোন স্থান ঝুঁকিপূর্ণ তা জেনে নেওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিভিন্ন নির্দেশিকা চিহ্ন বা মার্কা ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করেছি। খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে। আর ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকদের জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসা লাইফগার্ডদের নিয়ে করা ‘সী সেইফ’ প্রকল্পটি যেন বর্ধিত করা হয় সে ব্যাপারে দেখা ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সিআইপিআরবি এর উপনির্বাহী পরিচালক ড. আমিনুর রহমান বলেন, ‘সী সেইফ প্রকল্প’ ২০১৪ সাল থেকে কক্সবাজারের লাবণি, সুগন্ধা ও কলাতলী বিচে বিনামূল্যে লাইফগার্ড সেবা এবং শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সচেতনতামূলক কর্মশালা ও বিভিন্ন সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, শিশুসহ সবাইকে সাঁতার শেখানো হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা কক্সবাজারে একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে চাই।
উপস্থিতিরা এই উদ্যোগকে প্রশংসা করেন এবং এমন সুরক্ষা কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।
সচেতনতামূলক এই আয়োজন পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আরও সতর্ক করেছে এবং নিজেদের এবং প্রিয়জনদের নিরাপত্তার বিষয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাদের এ ধরনের কার্যক্রম স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়ামিন হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার, প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।