সারা বাংলা

ঋতুর দক্ষিণ এশিয়া জয়ে খুশি মা ভূজোপতি চাকমা

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা। সদ্য সমাপ্ত নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলায় তার গোলে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। হয়েছেন তিনি সেরা খেলোয়াড়। তার এমন অর্জনে আনন্দের বন্যা বইছে গ্রামের বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মগাছড়ি গ্রামে।

মূল সড়ক থেকে ধান খেত, বাঁশের সাঁকো, পাহাড়ি পথ আর ঝিরি অতিক্রম করে যেতে হয় মাগাছড়ি গ্রামে ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়িতে। টিনের চালা ও বাঁশের বেড়া দেওয়া ঘরে থাকেন ঋতুপর্ণার পরিবার। চার বোন ও এক ভাইয়ের সংসারে ঋতুর বয়স যখন ১১ তখন ক্যানসারে মারা যান তার বাবা। একমাত্র ভাই দুই বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছেন। বাবা-ভাইহীন সংসার টেনে নিচ্ছেন মা ভূজোপতি চাকমা। চার বোনের মধ্যে সবার ছোট ঋতু। বড় তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। তাই বাড়িতে একাই থাকেন মা ভূজোপতি চাকমা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মগাছড়ি গ্রামে আনন্দঘন পরিবেশ। এলাকাবাসী ঋতুর মাকে অভিনন্দন জানাতে বাসায় আসছেন। ঘরে শোভা পাচ্ছে ঋতুর বিভিন্ন সময়ে অর্জন করা মেডেল ও ক্রেস্ট।

ভূজোপতি চাকমা বলেন, ‘ওর (ঋতুপর্ণা চাকমা) সাফল্যে আমি খুবই খুশি। মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, আশীর্বাদ করতে বলেছে। গতবারও দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এবারও চ্যাম্পিয়ন হলো। আমি চাই ও আরো ভালো খেলে দেশের সুনাম বয়ে আনুক।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘গতবার যখন ঋতুরা জিতেছিল, তখন প্রশাসনের অনেকেই আমার বাড়িতে এসেছিল। সেসময় তারা বাড়িতে আসার রাস্তাসহ অনেক কিছু করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা তাদের কথা রাখেনি। আমার মেয়ে ঠিকই দেশের জন্য খেলে যাচ্ছে।’

ভূজোপতি চাকমার মেজ মেয়ের জামাই সুদীপ চাকমা বলেন, ‘গত বুধবার সন্ধ্যায় আমরা সবাই একসঙ্গে খেলা দেখেছি। যখন ঋতু গোল করেছে এবং বাংলাদেশ জিতেছে সবাই অনেক আনন্দিত হয়েছি। খেলা শেষে ঋতু ফোন করেছিল। সেও খুব খুশি সেরা খেলোয়াড় হতে পেরে।’

এলাকাবাসী জানান, ঋতুপর্ণার এই অর্জনের পথটি এতো মসৃণ ছিল না। ফুটবলের প্রতি একাগ্রতা আর ভালোবাসার কারণে শত প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেতে পেরেছেন তিনি বিশ্ব মঞ্চে। আমাদের গ্রামের মেয়ে দেশের হয়ে ফুটবল খেলে যে সম্মান বয়ে এনেছেন, সেটা আমাদের জন্য গর্বের। ওর সফলতায় আমরা কতোটা খুশি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। 

স্থানীয় বাসিন্দা ভুবন জয় চাকমা বলেন, ‘প্রথমবার যখন জিতেছিল, তখন প্রশাসনের অনেকেই এসেছিল। রাস্তা, বাড়িসহ অনেকিছুই করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিল। দুই বছর পার হলেও কোনো কিছুই হয়নি। আমরা খুব হতাশ হয়েছি। ধান খেতের ভেতর দিয়ে হেঁটে ঋতুর বাসায় যেতে হয়।’

টানা দ্বিতীয়বার সাফ বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় গর্বিত ঋতুর কোচ। ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে সংর্বধনার প্রস্তুতির কথা জানান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঋতুদের স্থানীয় কোচ শান্তি মনি চাকমা বলেন, ‘সেই দিনের ছোট মেয়েগুলো আজ দেশের হয়ে খেলে দেশেকে বিজয়ী করেছে। তার শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ও শ্রেষ্ঠ গোল রক্ষক নির্বাচিত হয়েছে। এটা আমার জন্য গর্বের। আশীর্বাদ করি ওরা আরও এগিয়ে যাক।’

ঋতু, রুপনা ও মনিকাদের আঁতুড়ঘর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা চাকমা বলেন, ‘ওরা আমাদের সন্তান। এখান থেকে ওরা ফুটবল খেলা শুরু করেছে। আজ দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করছে । আমরা ওদের সফলতায় খুশি। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাফ জয়ী নারী খেলোয়াড়দের সংবর্ধনার দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।’