সারা বাংলা

ইলিশ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা, মধ্যরাতের অপেক্ষা

নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে নদী ও সাগরে মাছ শিকারে যাত্রা শুরু করবেন বরগুনা উপকূলের লক্ষাধিক জেলে। ইতোমধ্যে তারা ট্রলার-জাল-দড়ি গুছিয়ে বরফ ও জ্বালানি-রসদ প্রস্তুত করেছেন মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য। 

২২ দিন বেকার সময় অতিবাহিত করার পর সাগরে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জেলেরা। এদিকে, চালুর অপেক্ষায় দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটার বিএফডিসি ঘাট।

রোববার সকালে পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জাল ও দড়ি গুছিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। অনেক জেলে নাজমা আইস মিলের ঘাট থেকে ট্রলারে বরফ তুলছেন। বরফ নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে অসংখ্য ট্রলার। বরফ নেওয়া শেষ হলে ট্রলারগুলো মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে নোঙর করে রাখা হচ্ছে।

‘এফ বি এলাহী’ ট্রলারের মাঝি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে মধ্যরাতে। আমরা তার আগেই জাল-দড়ি গুছিয়ে ট্রলার মেরামত করে নিয়েছি। বেকার সময়ে আমিসহ এই ট্রলারের ১৮ জেলে ধার দেনায় ডুবে গেছি। আশা করছি, ইলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মাছ সমুদ্র থেকে ধরতে পারবো। মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে ধার-দেনা পরিশোধ করতে পারবো।’

নাজমা আইস মিলের ঘাটে বরফ নিতে আসা ‘এফ বি রাফিয়া’ ট্রলারের মালিক ও মাঝি গোলাম হায়দার বলেন, ‘এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এক ঘণ্টার মধ্যে আমার ট্রলারে বরফ লোড (তোলা) হবে। আমরা নোঙর করে থাকবো মাছের খাল এলাকায়। রাত ১২টা বাজতেই গভীর সাগরে মাছ শিকারের উদ্দ্যেশ্যে চলে যাবো। আশা করি, অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়বে জালে।’

এই ট্রলারের একাধিক জেলে বলেন, মাছ শিকার করে সংসার চলে। মাছ শিকার বন্ধ থাকলে আমাদের পরিবার অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটায়। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন অভাব অনটনের মধ্যে খারাপ অবস্থায় ছিলাম।

অপর ট্রলারের মালিক এনামুল হোসাইন বলেন, ‘আমার তিনটি ট্রলারে ৫৪ জন জেলে। তারা গভীর সাগরে মাছ শিকার করেন। রাত ১২টায় তারা রওনা করবেন। তারা অন্তত ১৫ দিন পর ফিরবেন। তিনটি ট্রলারে জ্বালানিসহ ১২ লাখ ৮৬ হাজার টাকার রসদ কিনে দিয়েছি। চলতি ইলিশ মৌসুমে যতবার ট্রলার পাঠিয়েছি সাগরে প্রতিবার লোকসান হয়েছে। মৌসুমের শেষ সময়ে যদি মাছ পায়, তাহলে ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।’

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে ছিলাম নিষেধাজ্ঞা সফল করতে। মা ইলিশ সঠিকভাবে ডিম ছাড়তে পেরেছে। স্থানীয় প্রশাসন, নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড তৎপর ছিল। জেলেরা এখন সাগর ও নদীতে যাবেন। আশা করছি, সাগর ও নদীতে তারা প্রচুর মাছ পাবেন।’

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে. জিএম মাসুদ শিকদার বলেন, ‘ঘাট প্রস্তুত রেখেছি। মধ্যরাত থেকেই নদী ও মোহনায় মাছ শিকার করে জেলেরা ঘাটে নিয়ে আসবেন। আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’