শরীয়তপুরের ডামুড্যায় এক কাপড় ব্যবসায়ীকে নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে সোমবার (৪ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী।
অভিযোগের বিষয়ে ডামুড্যা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।
ভুক্তভোগীর নাম সোলাইমান ফরাজী। তিনি উপজেলার মডেরহাট বাজার এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করেন। চর ধানকাটি এলাকার বাসিন্দা তিনি।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মডেরহাট বাজার এলাকায় কাপড়ের দোকান চালাচ্ছেন সোলাইমান ফরাজী। গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে ১টার দিকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক। তিনি সোলাইমান ফরাজীর কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স চান। সোলাইমান ফরাজী প্রথমে ফটোকপি ও পরে মূল কপি দেখান। এরপর তার কাছে আয়কর সার্টিফিকেট চাইলে সেটি তিনি দেখাতে পারেননি। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
ক্ষুদ্র দোকানী হওয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে সোলাইমান ফরাজীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিকের। একপর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আনসার সদস্যকে দিয়ে তাকে (সোলাইমান ফরাজী) গাড়িতে উঠিয়ে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক। সেখান আটকে রেখে প্রথমে তাকে কানে ধরিয়ে উঠবস করানো হয়। পরবর্তীতে আনসার ও তিনি (আবু বকর সিদ্দিক) নিজে লাঠি দিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন সোলাইমান ফরাজী।
খবর পেয়ে ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও পৌর জামায়াতের আমির আতিকুর রহমান কবির ঘটনাস্থলে যান। তাদের অনুরোধে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ২ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন সোলাইমান ফরাজীকে।
ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে এসিল্যান্ডের অফিসে ছুটে যাই। তিনি আমাদের সামনেই সোলাইমান ফরাজীকে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেন। একপর্যায়ে তিনি লাঠি নিয়ে এসে আনসার সদস্যকে মারতে বলেন। আনসার সদস্য তাকে (সোলাইমান ফরাজীক) পেটাতে শুরু করে। তিনি (এসিল্যান্ড) নিজেও উঠে এসে পেটান।’
তিনি আরো বলেন, ‘কেউ ভুল করলে তাকে ভয় দেখানো যায়, জরিমানা করা যায়, কিন্তু একজন কর্মকর্তা এভাবে নিজ হাতে আইন তুলে নিয়ে মারতে পারেন যা কল্পনাও করিনি। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। যাতে পরবর্তীতে কোনো কর্মকর্তা এধরণের কর্মকাণ্ড করতে না পারেন।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমির মোহাম্মদ আতিকুর রহমান কবির বলেন, ‘আমাদের সামনে এসিল্যান্ড সাহেবের নির্দেশে আনসার সদস্যরা লাঠি দিয়ে সোলাইমান ফরাজীকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে এসিল্যান্ড নিজেও তাকে আঘাত করেন। ঘটনাটি দেখে আমরা বিস্মিত হয়ে যাই। একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে এমন অমানবিক কাজ করতে পারেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
ভুক্তভোগী সোলাইমান ফরাজী বলেন, ‘আমি গ্রামের ক্ষুদ্র একজন ব্যবসায়ী। যখন আমাকে জরিমানা করা হয়, আমি শুধু বলেছিলাম আমরা গ্রামের দোকানদার তাই আয়কর সার্টিফিকেট রাখি না। এতেই তিনি (এসিল্যান্ড) ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে তার অফিসে নিয়ে যান। সেখোনে কান ধরিয়ে উঠবস করান। পরে আনসার সদস্য দিয়ে আমার সারা শরীরে লাঠি দিয়ে পেটায়। তিনি নিজেও আমাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডামুড্যা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বিলিং লাইসেন্স আনতে হয়। ওই ব্যবসায়ী লাইসেন্সটি ছাড়াই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন। তাকে আইনগতভাবে কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে তিনজন জামায়াত নেতার অনুরোধে তাকে দুই হাজার জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছি। তাকে কান ধরিয়ে উঠবস করানো ও মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’
ডামুড্যা উপজেলার নির্বাহী অফিসার নাসরিন সেতু বলেন, ‘ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের ঘটনায় একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ ঘটনার তদন্তে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’