গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রমের হত্যার বিচার দাবি করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজশাহীতে আলাদা দুটি কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানায় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি। পাশাপাশি আরও বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন পরিষদের নেতারা।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের ওই হামলার ৮ বছর উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন।
সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম বলেন, রংপুর সুগার মিল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা সাঁওতালদের উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম মারা যান। গত আট বছরেও তাদের হত্যার বিচার হয়নি। অনেক সাঁওতাল এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অতীতের সরকার আশ্বাসের বাণী শোনালেও কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি অতিদ্রুত তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার ও আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ শাস্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান; সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন; অন্তর্রর্তী সরকারে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা; সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ১ হাজার ৮৪২ দশমিক ৩০ একর সম্পত্তি প্রকৃত জমি মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়াসহ বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা সভাপতি সন্তোষ সিং বাবু, বগুড়ার সাবেক সভাপতি যোগেশ সিং, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অনিল গজাড়, সাধারণ সম্পাদক শীত কুমার উরাও, বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক সাগর কুমার সিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে একই দাবি জানিয়ে সকালে নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গনেশ মার্ডী এতে সভাপতিত্ব করেন। এতে কেন্দ্রীয় সদস্য রাজকুমার শাও, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুশেন কুমার শ্যামদুয়ার, মহানগর সাধারণ সম্পাদক ছোটন সরদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
গাইবান্ধায় সাঁওতাল হত্যা দিবস পালন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনার আজ বুধবার (৬ নভেম্বর) ৮ বছর। এ দিন উপলক্ষে নিহত তিন সাঁওতালের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোক শোভাযাত্রা ও শোকসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পালন করেছে সাঁওতালরা।
দিনটি উপলক্ষে সকালে উপজেলার কাটামোড় নামক স্থানে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়। পরে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের কালো পতাকা, ব্যানার ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত ফেস্টুন নিয়ে শোক মিছিল করে। মিছিল শেষে সমাবেশে সাঁওতাল নেতারা বক্তব্য রাখেন।
তাদের অভিযাগ, হামলা, অগ্নিসংযোগ ও তিন সাঁওতাল হত্যা মামলার ৮ বছরেও বিচার কাজ শুরু হয়নি। এমনকি ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদ বুলবুলসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালরা অস্থায়ী ঘরবাড়ি করে কোনোরকমে বসবাস করে আসছেন। দ্রুত মামলার বিচার শুরু এবং বাপ-দাদার জমি ফেরতের দাবি জানান তারা।
২০১৬ সালের এইদিনে গোবিন্দগঞ্জের রংপুর সুগার মিলের বিরোধপুর্ণ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমিতে বসতি স্থাপনকারী সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে সুগার মিল কর্তৃপক্ষ। এ সময় সাঁওতালদের সঙ্গে পুলিশ ও সুগার মিল কর্তৃপক্ষের হামলা-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়। সাঁওতালদের ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। পুলিশের গুলিতে মারা যান শ্যামল হেমরম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু নামের তিন সাঁওতাল। আহত হন পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন।