টেন্ডার নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে তুলকালাম ও তত্ত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিএনপি নেতা এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলুকে শোকজ এবং যুবদল নেতা হাবিবুল্লাহকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকালে জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পাঁচ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) টেন্ডারের সব কাজ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হন জেলা বিএনপির সদস্য, বিএনপি’র সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের শ্যালক একে শরফুদ্দৌলা ছোটলু। তার নেতৃত্বে হাসপাতালের অফিসকক্ষে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদকে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
লাঞ্ছিতের সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিএনপি’র ওই নেতাকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় বিব্রত হন জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাকর্মীও।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে অনাকাঙ্খিত ঘটনার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জেলা বিএনপি বিষয়টি নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য মনে করে এবং তারা এর তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়েছে।’ জেলা বিএনপি’র বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কতিপয় ঠিকাদার ও সুপারের মধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নাই। বিএনপি যেমন রাষ্ট্রক্ষমতায় নাই, তেমনি টেন্ডার সংক্রান্ত বা দখলদারিত্বের মতো কোনো বিষয়েও বিএনপি’র কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা যেন না থাকে সে ব্যাপারে দলে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়- ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক বা ঠিকাদারি কাজে কেউ অনৈতিক সুবিধা নিতে চাইলে তিনি দলের যে কোনো স্তরের নেতা বা কর্মী হোক না কেনো- তার বিরুদ্ধে দল কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে যা অব্যাহত থাকবে। ফলে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুল্লাহকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলুকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে দল কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিগত পতিত সরকারের টেন্ডারবাজি ও দখলবাজির কারণে প্রতিটা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। তাই কোনো রকম টেন্ডারবাজি ও দখলবাজি বিএনপি সমর্থন করে না এবং ভবিষ্যতেও করবে না। তাই বিএনপি’র অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কোনো ব্যক্তি যদি এহেন কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ন্যূনতম সংশ্লিষ্ট হন তাহলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থার আওতাভুক্ত হবেন বলে কঠোর হুঁশিয়াররি দেয়া হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজীবন সংগ্রামী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম তরিকুল ইসলামের পরিবারের কোনো সদস্য ঠিকাদারি করেন না। বরং রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালে সব প্রকার দখলদারিত্বের বিষয় তিনি কঠোরভাবে দমন করেছেন, যা যশোরবাসী জানে। অতএব, যশোর জেলা বিএনপি সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল ও থাকবে। এ কে শরফুদ্দৌলা (ছোটলু) প্রয়াত বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের শ্যালক।
শোকজের বিষয়ে জেলা বিএনপি’র সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু বলেন, ‘ঘটনার সময় যেহেতু আমি সেখানে ছিলাম, তাই দল শোকজ করেছে। তবে আমি ওই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই।’