সারা বাংলা

গরিবের ‘সুপারশপ’

সড়কের পাশে শতবর্ষী কড়াই গাছ। সেই গাছের গায়ে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যতিক্রমী সবজির দোকান। মাটি থেকে কয়েকফুট উপরে খড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে চালা। তার নিচে কাঠ ও বাশ দিয়ে করা হয়েছে সবজির রাখার জন্য ৪ স্তরের র‌্যাক। সেখানে সাজানো রয়েছে সবজি। প্রত্যেকটি সবজির দামও লিখে রাখা হয়েছে সবজির পাশে। স্থানীয়রা এই দোকানটিকে গরিবের সুপারশপ বলেই জানে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বৈশাখী পাম্পের বিতরীতে ভূষণ সড়কে ব্যতিক্রমী এ দোকান করেছেন উপজেলার দক্ষিণ আড়পাড়া গ্রামের মাসুদ রানা। 

জানা গেছে, এক সময়ের মালয়েশিয়া প্রবাসী মাসুদ রানা স্ত্রীর প্রতারণায় দেশে ফিরে হারিয়েছে সবকিছু। সংসার চালাতে করেছেন চাকরি ও ব্যবসা। সবকিছু হারিয়েছে নিঃস্ব হয়ে এক বছর আগে সড়কের পাশের এই গাছটিতে তিনি দোকান দিয়েছেন। এখানে তিনি বিক্রি করেন আলু, কপি, শিম, বেগুন, পটল, ঢেঁড়স, মিষ্টিকুমড়া, শসাসহ প্রায় সব প্রকার সবজি। স্থানীয় বাজার থেকেও কিছুটা কমে তার দোকানে পাওয়া যায় টাটকা এসব সবজি। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা ও বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ দোকান।

স্থানীয় যুবক কামরুজ্জামান রকি বলেন, এই দোকানের নাম দেওয়া হয়েছে গরিবের সুপার শপ। বাজার থেকে কম দামেই বিভিন্ন সবজি পাওয়া যায় এখানে। এটি একটি ব্যতিক্রমী দোকান। দোকানদার না থাকলেও আপনি জিনিসপত্র কিনতে পারবেন। গাছের সাথে এমন দোকান উপজেলায় আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

আব্দুল মান্নান নামে এক বৃদ্ধ বলেন, রাস্তার পাশে এমন গাছে সাজানো জিনিসপত্রের দোকান আগে দেখিনি। দোকানদার জিনিসপত্রগুলো খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখেন। নিজেদের ইচ্ছামতো জিনিসপত্র ক্রয় করা যায় এখান থেকে। দোকানদার মাসুদ রানা খুবই অসহায়। তিনি যে মানুষের কাছে হাত না পেতে কিছু করার প্রত্যয় নিয়েছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ। অনেক সময় তিনি দোকান খুলে রেখে চলে যান। ক্রেতারা জিনিসপত্র নিয়ে টাকা রেখে যান নিদিষ্ট স্থানে।

 

দোকানটির বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ রানা বলেন, মালয়েশিয়ায় যখন থাকতাম তখন অনেক ভালো সময় কেটেছে। কিন্তু পারিবারিক কারণে আজ আমি অসহায়। ভালো সময়ে অনেক বন্ধু ছিল কিন্তু বিপদে পড়ার পর কেউ কথাও বলে না। এরপর কি করে জীবন কাটাবো এই নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। 

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ মাথায় এলো একটা দোকান দেওয়ার। বাজারের কোথাও দোকান নিলে তার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। সাথে দিতে হবে মাসিক ভাড়াও। কিন্তু সেই টাকা নেই আমার। তাই সড়কের পাশেই গাছের গায়ে তৈরি করেছি এই দোকান। বাড়িতে নষ্ট হওয়া খাটের কাঠ এই দোকান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় দোকান বড় করতে পারছি না আমি। তবুও এ দোকানের আয় দিয়ে আমার ভালো কেটে যাচ্ছে।