ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের স্যানিটেশন সুবিধার জন্য ‘ভাসমান টয়লেট’ উদ্ভাবন করেছেন মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না। এটি ফলপ্রসু হলে জলাবদ্ধ এই অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার একটি সমাধান মিলবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না’র পরিকল্পনা ও আর্থিক সহায়তায় উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর এই ‘ভাসমান টয়লেট’টি তৈরি করেছে।
নিশাত তামান্না জানান, পাইলট আকারে এই টয়লেট স্থাপনের পর জলাবদ্ধ জনগোষ্ঠী উপকৃত হলে এটি প্রকল্প আকারে গ্রহণ করা হবে ।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুঃখ ‘ভবদহর জলাবদ্ধতা’ সমস্যায় আক্রান্ত এই অঞ্চলের তিনটি জেলা। যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর, খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া এবং সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাঁচ শতাধিক গ্রাম এই জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের ভারি বর্ষণ ও উজানের নেমে আসা পানিতে এই গ্রামগুলোর প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রতিবছর কম-বেশি জলাবদ্ধতার শিকার হন। এবছর নাজুক পরিস্থিতিতে এখনও কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন তাদের। বিশুদ্ধ খাবার পানি সঙ্কটের পাশাপাশি স্যানিটেশনেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। কখনও পানির মধ্যেই, কখনও উঁচু সড়কের পাশে কোনো রকমে টয়লেট তৈরি করে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়। জলাবদ্ধ মানুষের এই দুর্দশা দেখে নিশাত তামান্না ‘ভাসমান টয়লেট’র পরিকল্পনা করেন।
নিশাত তামান্না বলেন, ‘ভবদহ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে আমি লক্ষ করি জলাবদ্ধতার কারণে স্যানিটেশনে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই জনপদের মানুষকে। বিশেষ করে নারীদের এই দুর্দশা অবর্ণনীয়। তখনই আমি চিন্তা করি তাদের টয়লেটের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তখন আমার মাথা আসে ঝাপা বাওড়ের ভাসমান সেতুর প্রযুক্তির কথা। পরে সেটি কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ উপজেলা প্রশাসনের নিজ পরিকল্পনায় আমরা ভাসমান টয়লেট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।
‘ভাসমান টয়লেট’ তৈরি প্রসঙ্গে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জয়দেব দত্ত জানান, মূলত ঝাপা বাওড়ে ভাসমান সেতুর প্রযুক্তি ব্যবহারে এই ভাসমান টয়লেট তৈরি করা হয়েছে। এতে ৫টি প্লাস্টিকের ড্রাম, কাঠ ও লোহার ফ্রেম এবং টিন ব্যবহৃত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি ভাসমান টয়লেট তৈরিতে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। ভাসমান টয়লেটের প্রধান সুবিধা এটি পানির উপর সহজেই ভাসতে পারবে। এই টয়লেটে একটি ড্রাম এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে পয়ঃবর্জ্য পানিতে পড়ে পরিবেশ দূষিত না করে। ড্রাম ভর্তি হয়ে গেলে সহজেই খুলে ফের স্থাপন করা যাবে।
নিশাত তামান্না আরও জানান, প্রাথমিকভাবে একটি ‘ভাসমান টয়লেট’ তৈরি করা হয়েছে। দ্রুতই এটি হস্তান্তর করা হবে। আরও ৮টি ‘ভাসমান টয়লেট’ তৈরির কাজ চলছে। পাইলট আকারে এই টয়লেট স্থাপনের পর জলাবদ্ধ জনগোষ্ঠী উপকৃত হলে এটি প্রকল্প আকারে গ্রহণ করা হবে। তখন মণিরামপুরের জলাবদ্ধ অঞ্চলের মানুষের মাঝে তা বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।