সারা বাংলা

আউট সোর্সিংয়ের বেতন বন্ধ দেড় বছর 

সাইফুল ইসলাম ২০২২ সালে অনেক স্বপ্ন নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন। চুক্তি ভিত্তিক প্রকল্প হলেও স্বপ্ন দেখেছিলেন চাকরি রাজস্বখাতে হবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ২৩ মাসের প্রায় চার লাখ টাকা বেতন আটকা পড়েছে। বাবা, মা ও স্ত্রী তার আয়ের উপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি ছেলের বাবা হয়েছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে বেতন আটকা থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে এখন পথে বসার উপক্রম। 

সাইফুলের মতো ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ‘বহুমুখী উদ্ধার ও অনুসন্ধান কাজের লক্ষ্যে নৌযান সংগ্রহ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ’ প্রকল্পে মানিকগঞ্জে ৭ জন নিয়োগ পান। এদের সবার দেড় থেকে দুই বছরের বেতন আটকা থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। মানিকগঞ্জে এই ৭ জনের সাথে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ পাওয়া আরও ৮১ জনের একই হাল। 

সাইফুল ইসলাম বলেন, ভেঙে ভেঙে ১২ মাস বেতন পেলেও ২৩ মাসের কোনো বেতন পাইনি। চাকরির বয়স ৩৫ মাস চলছে। চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ হলেও বলা হয়েছিলো সরকারীকরণ করা হবে। এখন তো বেতনই পাচ্ছি না। বাচ্চার বয়স তিন মাস হলো। গত পাঁচ মাস ধরে এক টাকা বেতনও পাইনি। 

মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এক টাকাও বেতন পাইনি। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ৫ মাসের বেতনও বন্ধ রয়েছে। ৩৫ মাস চাকরি করলেও ১৮ মাস বেতন পেয়েছি। ছোট ভাইকে একটি দোকান করে দিতে গিয়ে ৪ লাখ টাকা লোন করতে হয়েছে। ভেবেছিলাম চাকরির বেতন থেকে কিস্তির টাকা দিতে পারবো। এখন তো মরার উপর খাড়ার ঘা। বেতনও নাই, কিস্তির টাকাও পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছি। বাবা সামান্য বেতনে গ্রাম পুলিশের চাকরি করেন, ভাইটা কোনো রকমে দোকান করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছে। আমার তো কোনো আয় রোজগার নাই। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারি না। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশের উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের ৪৪টি জেলা প্রতি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার সময় আটকে পড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ, বৃদ্ধ ও শিশুদের উদ্ধার করতে সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন নৌযান প্রয়োজন হয়। এছাড়া গবাদিপশু ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি নিরাপদে সরিয়ে নিতেও বিরূপ আবহাওয়ায় চলাচল উপযোগী নৌযান লাগে। বর্তমানে বন্যাকবলিত এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ছোট ছোট নৌযান থাকলেও ওই নৌযানগুলোতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ এবং বৃদ্ধ ও শিশুদের উপযোগী প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নেই। এছাড়া সকল নৌযান বিরূপ আবহাওয়ায় চলাচলের উপযোগী নয়। তাই এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২০টি দুর্যোগকালীন উদ্ধার নৌযান ক্রয়, পূর্বে সংগৃহীত ৪০টি নৌযানসহ ৬০টি নৌযানের জ্বালানি সরবরাহ ও মেরামত এবং ৮৮ জন জনবলকে নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এ প্রকল্পের আউট সোর্সিংয়ে কর্মরতরা বকেয়া বেতন আদায় ও রাজস্বখাতে চাকরি স্থায়ীকরনের দাবিতে কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির আহ্বায়ক মো. তবিবুর রহমান বলেন, তিন ধাপের নিয়োগ পাওয়া ৮৮ জনের লাখ লাখ টাকা বেতন বকেয়া রয়েছে। সেই সাথে এখনো চাকরি স্থায়ীকরন করা হয়নি। এ বিষয়ে আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো অবহিত করেছি। কিন্তু কোনো ফলাফল পাইনি। মাসের পর মাস বেতন আটকা থাকায় আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদের দেখার কেউ নাই। 

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাথী দাস বলেন, গত সপ্তাহে বিষয়টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সিনিয়রদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 

বর্তমানে এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ত্রাণ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আসাদুজ্জমান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ জুন মাসে শেষ হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা বিভাগে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছিলো। পরিকল্পনা বিভাগ কিছু নির্দেশনা দিয়ে তারা ফেরত পাঠিয়েছেন। কি ধরনের নৌযান কেনা হবে ও বেতন ভাতায় কত টাকা খরচ হবে তা লিখে প্রকল্প সংশোধন করে পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রকল্পে এ অংশগুলো সংশোধন করে পুনরায় পরিকল্পনা বিভাগে পাঠানো হবে।