গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, অসহযোগিতা ও দাপ্তরিক খরচ বকেয়া রাখার দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে) অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান এ অভিযোগটি দায়ের করেন।
এ এস এম সফিউল আজম ২০তম বিসিএস প্রশাসনের মাধ্যমে ২০০১ সালে চাকরিতে প্রবেশ করেন। পরবর্তী ২০২২ সালের ৬ মার্চ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত আছি। যোগদানের পরেই বিভিন্ন অনিয়ম, অসঙ্গতি ও নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিষয়গুলো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে সমাধান না করে আরও হয়রানি করতেন।
আমি যোগদানের সময়ে মেয়রের একান্ত সচিব (পিএস) পদে কেউ কর্মরত ছিলো না। তখন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে অফিস আদেশ ছাড়াই দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন, পাশাপাশি মেয়রের দপ্তরের সকল ফাইলপত্র হস্তান্তর করেন। জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করলেও দায়িত্বকালীন আট (৮) মাসে বেসামরিক হিসাব পদ্ধতির ৪৭ অনুচ্ছেদ মোতাবেক সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ এর কাছ থেকে তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জনসংযোগ বিভাগের ফাইলগুলো কল্যাণ শাখা, হিসাব শাখা, যান্ত্রিক শাখা থেকে জনসংযোগ বিভাগে হস্তান্তরের কথা বললে সিও বিষয়টি এড়িয়ে যান। এতে বিগত সময়ে বিভিন্ন জাতীয় ও দৈনিক পত্রিকার শুভেচ্ছা ও টেন্ডার বিজ্ঞাপন ফাইল উপস্থাপন ও নিষ্পত্তিকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে প্রশাসন বিল উপস্থাপনের নির্দেশ দিলেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বাঁধার কারণে সে প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এতে বিগত কয়েক বছরে বকেয়া বিল আটকে যাওয়ায় সাংবাদিক মহলে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও কিছু জটিলতা পূর্ণ ফাইল অনিষ্পন্ন অবস্থায় থাকলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। তিনি জনসংযোগ বিভাগের অনন্য সুযোগ সুবিধা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান ও চাকরি থাকবে না বলেও হুমকি দেন।
আমার রুমে ইন্টারনেট লাইন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, টেলিফোন লাইন ছিলো না। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বার বার চাওয়া হলেও লজিস্টিককোন সাপোর্ট গুলো দেননি। পরে নিজ অর্থায়নে এগুলো ক্রয় করলেও ভাউচারে সাক্ষর করেননি। ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুর এ অনুষ্ঠিতব্য World Cities Summit এ ছুটি ছাড়াই আমাকে মেয়রের সফর সঙ্গী হিসাবে যেতে বাধ্য করেন। অতিথি আপ্যায়নে কোনো ইমপ্রেস ফান্ড বরাদ্দের কোনো টাকা দেয়নি। ৮ মাসে আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অফিস থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলেও অদ্যাবধি দাপ্তরিক খরচের অর্থ প্রদান করা হয়নি। দাপ্তরিক খরচের বিল ভাউচার সংক্রান্ত ফাইলটি প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার মাধ্যমে আটকে রাখা হয়। আমার জন্য গাড়ি বরাদ্দ থাকলেও দেয়নি। গাড়ি ও জ্বালানি খরচ এর অর্থ বরাদ্দ হলেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার সাথে আঁতাত করে সব অর্থ আত্মসাৎ করেন।
গাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে সে যদি অভিযোগ দেয় সেটিও নিয়ম বর্হিভুত হয়েছে। তিনি দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় নিয়ম-কানুন না মেনেই অনেক কাজ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে লুৎফর রহমান বলেন, গত ৭ নভেম্বর অভিযোগ দিয়েছি, অভিযোগে উল্লেখিত তথ্যগুলোই আমার বক্তব্য। সিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আপনার ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, উপর মহল থেকে অভিযোগ উঠিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অন্যথায় বিভাগীয় মামলা দিয়ে চাকরি খেয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক হুমায়ুন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ এসেছে একটি। আপনার সাথে বিষয়টি নিয়ে পড়ে কথা বলবো।