সারা বাংলা

সাদকে নিয়ে র‌্যাবের বক্তব্যে ‘মর্মাহত’ বাবা

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বাড়ির ডিপ ফ্রিজ থেকে লাশ উদ্ধার করা নারীকে তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯) হত্যা করেছে বলে জানিয়েছিল র‌্যাব। সাদকে নিয়ে র‌্যাবের এমন বক্তব্যে মর্মাহত হয়েছিলেন তার বাবা আজিজুর রহমান।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে আজিজুর রহমান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘গত ১১ নভেম্বর স্ত্রী উম্মে সালমার জানাজার পর আমাকে ও ছেলে সাদ আজিজুর রহমানকে র‌্যাব তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপর সাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন আমি পাশের কক্ষেই ছিলাম। সাদকে অনেক টর্চার করা হয়।’

আজিজুর রহমান বলেন, ‘র‌্যাব যখন সংবাদ সম্মেলন করে জানাল, সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আমরা খুব অবাক হয়েছি। ধারণা করেছিলাম, হয়তো টর্চারের কারণেই সে মাকে হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছিল। তবে, প্রাথমিকভাবে পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডে সাদের সম্পৃক্ততা পায়নি। কিন্তু, র‌্যাবের সেই ঘটনায় আমার ছেলের ও আমার ব্যাপক সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ছেলের মানসিক অবস্থা এখন কী একমাত্র সেই বলতে পারবে।’

বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল একটা বাহিনী (র‌্যাব) এমন কাজ করবে কখনো আশা করিনি। এ ঘটনায় আমরা কোনো লিগ্যাল অ্যাকশনে যাব কিনা এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’

এর আগে, গত রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে দুপচাঁচিয়া উপজেলার জয়পুরপাড়া এলাকায় ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’ নামক বাড়ির একটি ফ্ল্যাটের ডিপ ফ্রিজ থেকে উম্মে সালমা (৫০) নামে এক গৃহবধূর লাশ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরদিন উম্মে সালমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার ক‌রে র‌্যাব। পরদিন দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান সাংবাদিকদের জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহ‌যো‌গিতায় নিহতের স্বামী আজিজুর রহমান, ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানসহ আরও একজন‌কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব অফিসে ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সাদ তার মা‌কে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

র‌্যাব দাবি করেছিল, হাত খরচের টাকা এবং প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মনোমালিন্যের জেরেই মাকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে বন্দী করে ছেলেটি।

তবে, পুলিশ তদন্তে নেমে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাড়ির ভাড়াটিয়া মাবিয়া সুলতানাসহ তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনায় নতুন মোড় নেয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ভাড়াটিয়া মাবিয়ার বিষয়ে আজিজুর রহমান বলেন, ‘মাবিয়া নামের ওই নারী ৪-৫ মাস আগে আমার বাড়ি ভাড়া নেয়। শুরু থেকেই তার আচরণ আমাদের কাছে ভালো লাগেনি। আমার স্ত্রী গত সপ্তাহে বলেছিল, ওকে রাখা যাবে না; বের করে দাও। আমি তাকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। সে সময় চেয়েছিল।’

‘এরইমধ্যে, একদিন আমার স্ত্রীর সঙ্গে মাবিয়ার ঝগড়া হয়। সেসময় আমার স্ত্রী তাকে বলেছিল, আপনি চলে যান। আপনার ভাড়া দেওয়া লাগবে না। পরবর্তীতে মাবিয়া আমার স্ত্রীকে জোর করে বের করে দিতে পারবে না বলে হুমকি দেয়।’- যোগ করেন তিনি।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের দুইদিন আগেও আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিল, তুমি ওকে বের করে দাও। সে যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে। আমি তাকে বের করে দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছিলাম। কিন্তু, তার আগেই এই ঘটনা ঘটে গেল।’

পুলিশের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘মাবিয়াসহ আরও দুই যুবক আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। প্রথমে মাবিয়া বাসায় প্রবেশ করে, পরে দুই যুবক। সে সময় আমার স্ত্রী তরকারি কাটছিল। তারা প্রথমে আমার স্ত্রীর নাকে স্প্রে করে। এতে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে হাত-পা বেঁধে ডিপ ফ্রিজের ভেতরে রেখে দেয়।’

আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পর র‌্যাব তদন্তে এলে মাবিয়ার বিষয়টি বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমলে নেয়নি। পরে পুলিশকে জানিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সংস্থাকেই বলেছি, হত্যার আসল রহস্য বেরিয়ে আসুক। এতে যদি আমার ছেলে অপরাধ করেছে প্রমাণিত হয়, তাহলে তার শাস্তি হবে। কিন্তু নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তি না পায়।’

এ বিষয়ে জানতে র‌্যাব-১২ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার এএসপি ওসমান গনির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘উম্মে সালমা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিন জনের মধ্যে মোসলেম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মাবিয়া সুলতানা এবং সুমন রবিদাস তালুকদার জবানবন্দি না দেওয়ায় তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হয়েছে।’