সারা বাংলা

সন্তোষে মওলানা ভাসানীর মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল

মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ভাসানীর মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকে ঢল নেমেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।

প্রয়াত এই নেতার মাজারে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরিবার,  বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করছে। ক’দিন আগে থেকে মওলানা ভাসানীর ভক্ত, অনুসারীরা সন্তোষে এসে উপস্থিত হয়েছেন। ইতিমধ্যে সন্তোষে ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী মেলা বসেছে। বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, সেমিনার চলছে। 

মাজার প্রাঙ্গণে ভক্ত, অনুসারী ও মুরিদরা ‘যুগ যুগ জিও তুমি, মওলানা ভাসানী’ স্লোগানে ক্ষণে ক্ষণে আওয়াজ তুলছেন।

সংরক্ষণের অভাবে অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা তার স্মৃতিচিহ্নগুলো হারিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বিগত দিনে যারাই সরকার ছিলেন তাদের দায়বদ্ধতার ঘাটতি ছিল বলেই ভাসানীর হাতে গড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যমুনা সেতু ও টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ ভাসানীর নামে করার দাবি তাদের। জাতীয় নেতার মর্যাদার পাশাপাশি, মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি সচেতন মহলের। দেশের মানুষের স্বার্থে তাকে নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করে ভাসানী ফাউন্ডেশন।

মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও তার জীবনের সিংহভাগই টাঙ্গাইলের সন্তোষে কাটিয়েছেন। সন্তোষের মাটিতেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।

আলতাব মাহমুদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ভারত, এশিয়া, আফ্রিকা, লেটিনসহ নানা দেশে ভাসানীকে নিয়ে চর্চা ও গবেষণা করা হয়। তার চিন্তা ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে। নতুন সরকারের কাছে ভাসানীকে যথাযথ সম্মান করে তার চেতনাকে বাস্তবায়ন করার দাবি তাদের। 

মওলানা ভাসানীর নাতি হাসরত খান ভাসানী ও আজাদ খান ভাসানী জানান, ভাসানী দেশ ও জাতির জন্য জীবনকে উৎসর্গ করলেও ইতিপূর্বে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেউ জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মৃত্যুর পর তার শেষ স্বপ্ন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় মুখ থুবড়ে পড়ে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ভাসানীর হাতে গড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যমুনা সেতু ও টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভাসানীর নামে করার দাবির পাশাপাশি সারা পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের পাশে থাকতে চায় তার পরিবার।

মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মাহমুদুল হক সানু বলেন, ‘বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলনে ভাসানীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তাকে জাতীয়ভাবে তুলে ধরলে দেশের মানুষেরই উপকার হবে। তার জীবন নিয়ে আরও বেশি গবেষণা করে তা মানুষের মাঝে তুলে ধরা প্রয়োজন।’

মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের সভাপতি নাজিমউদ্দিন বলেন, ‘সাম্যের দেশ ও বিশ্ব গড়ে তুলতে বৈষম্যবিরোধী, স্বাধীনতা ও মানবকল্যাণের পক্ষে কাজ করেছেন ভাসানী। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের নেতা ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার পরও দেশ স্বাধীনের পরে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে সম্মান জানানো হয়নি। জাতীয় নেতার মর্যাদার পাশাপাশি, মাওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি করছি।’

এর আগে শনিবার মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মওলানা ভাসানীর মাজারে সকালে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ক্যাম্পাসস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকেও পুস্পস্তবক অর্পণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আগত অতিথিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, আলোচনা সভাসহ মৃত্যুবার্ষিকী পালনে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।