‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’ প্রবাদটি যেন খুলনার ভোক্তা অধিকার নামক সরকারি প্রতিষ্ঠানটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জেলার নয়টি উপজেলা ও সিটি করপোরেশন মিলে প্রায় ২৭ লাখ মানুষের ভোক্তা অধিকার দেখার জন্য লোকবল হিসেবে রয়েছে মাত্র দুইজন। এর মধ্যে একজন সহকারী পরিচালক ও একজন অফিস সহকারী। খুলনা শহরসহ শহরতলীর নির্দিষ্ট কিছু অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করে বলে অভিযোগ রয়েছে ভোক্তা অধিকারের বিরুদ্ধে।
সূত্র মতে, চলতি বছরের জুন থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৩১টি অভিযোগ জমা পড়েছে জেলা ভোক্তা অধিকারের দপ্তরে। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২১টি। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১০টি। এ ছাড়াও নিজস্ব উদ্যোগে গেল জুন মাস থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ৬৯টি। এ সময় জরিমানা বাবদ আদায় হয়েছে ৭ লাখ ১ হাজার ৫শ’ টাকা।
জানা যায়, অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয় কসমেটিকস, মাংসের বাজার, মিষ্টির দোকান, নিত্যপণ্যের বাজার, খাবারের হোটেল, বেকারি, ফার্মেসীসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানকে। গত সাড়ে পাঁচ মাসে ৬৯টি অভিযানের বেশিরভাগই ছিল খুলনা মহানগরীতে। কিছু অভিযান খুলনার বাইরে- ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা, ফুলতলা ও পাইকগাছায় করা হয়েছে। তবে এই দীর্ঘ সময়ে কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় পা দেননি ভোক্তা অধিকারের কেউ।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ভোক্তা অধিকার লোক দেখানো অভিযান করে। ৫-৬টা প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র জরিমানা করে অভিযান শেষ করে। তাদের বেশিরভাগ অভিযান শহরকেন্দ্রিক। উপজেলাগুলোতে যান না বললেই চলে, কালে-ভদ্রে গেলেও অভিযান চলে দায়সারা। এই মুহূর্তে দাম বেড়ে যাওয়া আলু, ডিমের বাজারে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। খামারি যারা বেশি দামে ডিম বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা দরকার। তা না করে তারা কিছু খুচরা দোকানে অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যান না বললেই চলে। আবার ভোক্তারা অভিযোগ করলেও অনেক ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা না করে এড়িয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কয়রার গোবরা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘কয়রাতে আমি কখনো ভোক্তা অধিকারের কাউকে দেখিনি। সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় এখানে মধু আহরণ হয়। প্রতিনিয়ত মধুতে ভেজাল মিশ্রণ করা হয়, যাতে প্রতারিত হয় মানুষ। কিন্তু এগুলো দেখবে কে?’’
খুলনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আরিফ রহমান। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিনিয়ত আমরা ঠকছি ও ভেজাল খাচ্ছি। কিছু বাজার, মিষ্টির দোকান, ওষুধের দোকানে অভিযান করলে হবে না, এদের যারা নিয়ন্ত্রণ করে সেই সব বড় ব্যবসায়ীদের ধরতে হবে।’’
ভোক্তা অধিকার সংগঠন সিসিএসের যুব সংগঠন সিওয়াইবির খুলনা বিএল কলেজ শাখার সভাপতি রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘‘মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। লোক দেখানো অভিযান করা অসৎ ব্যবসায়ীদের সুড়সুড়ি দেওয়া একই কথা।’’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আমি ও অফিস সহকারী মো. রাজু হোসেন মিলে খুলনা অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা যখন দু’জন অভিযানে বের হই তখন জেলা অফিসটি তালাবদ্ধ করে যেতে হয়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘চরম জনবল সংকটের বিষয়টি অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তর থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে একজন করে কর্মকর্তা এবং জেলা পর্যায়ে দুই-তিন জন করে ফিল্ড অফিসার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’ তবে জনবল সংকটের কারণে সব উপজেলা ও খুলনা মহানগর অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না বলেও তিনি জানান।