সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় সম্প্রতিকালে দুইদফা বন্যায় স্থানীয় সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক সড়কের পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক মাস ধরে এই অবস্থা চলায় গর্তগুলো আরও বড় আকার ধারণ করেছে। এতে যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সড়কে যাতায়াতকারী মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। সড়ক নিয়ে নানা অভিযোগ ও মেরামতের দাবি জানানো হলেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) আওতাধীন জগন্নাথপুর উপজেলায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে জগন্নাথপুর-শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়কে ৬ কিলোমিটার, কলকলিয়া-তেলিকোনা-চণ্ডীডর সড়কে ৫ কিলোমিটার, চিলাউড়া-হলিদপুর সড়কে ৫ কিলোমিটার, কেশবপুর-এরালিয়া ভায়া রসুলগঞ্জ সড়কে ১০ কিলোমিটার, শিবগঞ্জ-রানীগঞ্জ সড়কে ২ কিলোমিটার ও মজিদপুর-এরালিয়া সড়কের ২ কিলোমিটার ও জগন্নাথপুর-সৈয়দপুর এলাকাজুড়ে বিশাল গর্ত ও খানাখন্দ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী। এসব সড়কের মধ্যে গর্ত ও খানাখন্দ থাকায় নিরাপদে গাড়ি চালাতে চালকদের যেমন সতর্ক থাকতে হচ্ছে, তেমনি যাত্রীরা থাকেন ঝাঁকুনির মধ্যে।
এদিকে গত চার মাস ধরে কেশবপুর-এরালিয়া ভায়া রসুলগঞ্জ সড়কে এবং গত ২০ আগস্ট থেকে জগন্নাথপুর শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়কে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুন শুরু হওয়া ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও জেলায় ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জগন্নাথপুর উপজেলায় প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। তার কিছুদিনের মধ্যে আবার (১ জুলাই) থেকে উপজেলার প্রধান নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে উপজেলার বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে চলাফেরা করার জন্য এলাকাবাসী ও প্রবাসী বিত্তবানদের অর্থায়নে কয়েকটি স্থান মেরামত কাজ করে কিছুটা উপযোগী করা হয়েছিলো।
জগন্নাথপুর-শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালক রফিক মিয়া বলেন, “এই সড়কে নতুন গাড়ি নামালে কয়েক দিনেই পুরাতন হয়ে যায়। এতো ভাঙা সড়কে গাড়ি চালানো যায় না, আবার গাড়ি না চালালেও সংসার চলে না। এ সড়কটা যদি সরকার দ্রুত মেরামত করে দিতেন তাহলে আমাদের কষ্ট কমে যেতো।”
রসুলগঞ্জ সড়কের যাত্রী সাকিল হোসেন বলেন, “প্রতিদিন আমাকে জগন্নাথপুর পৌরসভার পাশের মার্কেটে যেতে হয়। কিন্তু সড়কটি ভাঙা থাকায় যেমন ভোগান্তি হয়, তেমন বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। বড় বড় ভাঙার কারণে গাড়ির ঝাঁকুনিতে শরীর খারাপ হয়ে যায়। যদিও আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা নাগরিক ফোরামের সদস্য রুমানুল হক রুমেন বলেন, “২০২২ সালের স্মরণকালের বন্যার পর থেকে গত দুই বছরে এ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কোনো সড়কে কাজ করা হয়নি। ফলে বর্তমানে উপজেলার সবকয়টি সড়কের বেহাল দশা। সড়কের কারণে আমরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছি। স্থানীয়দের উদ্যোগে মেরামত না হলে যান চলাচল বন্ধ থাকত। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানাচ্ছি।”
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, “মূলত গত ২০২২ সালের বন্যায় আমাদের উপজেলার বিভিন্ন সড়কের ক্ষতি হয়েছিলো, সেটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে চলতি বছর বন্যার কারণে আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতুর সংস্কারের অনুমোদন করা হয়েছে। আশা করছি টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত কাজ শুরু হবে।