গাজীপুরের শ্রীপুরে চার উদ্যোক্তা মিলে দার্জিলিং ও চায়না মেন্ডারিন জাতের কমলা চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি ফলন পেয়ে খুশি এ চার উদ্যোক্তা। নির্দিষ্ট মূল্যে টিকিট সংগ্রহ করে ক্রেতারা বাগান ঘুরে নিজের পছন্দ মতো নিজ হাতে নগদ টাকায় সংগ্রহ করতে পারেন কমলা।
বাগান কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট চালু করলেও দেশেই এমন সুমিষ্ট, সতেজ ও কেমিক্যাল মুক্ত কমলা পেয়ে খুশি ক্রেতারা। বাগানে দুই জাতের কমলা রয়েছে। তবে ক্রেতাদের পছন্দ দার্জিলিং কমলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর গ্রামের ছয়বিঘা জমিতে মিশ্র ফলের বাগান করেছেন চার বন্ধু মো. অলিউল্লাহ বায়েজিদ, ফারুক আহমেদ, আব্দুল মতিন ও আইনুল হক। মিশ্র ফলের বাগানের সঙ্গে রয়েছে দার্জিলিং ও চায়না মেন্ডারিনা কমলা। এছাড়া বাগানে রয়েছে কমপক্ষে ১০ জাতের আম, ড্রাগনসহ নানা ধরনের দেশি-বিদেশি ফল।
বাগান ঘুরে দেখা গেছে, সুন্দর ও সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো রয়েছে কমলা গাছ। প্রতিটি সারির মাঝখানে পায়ে হেঁটে চলাচলের পথ রয়েছে। চার বছর পূর্বে রোপণ করা গাছগুলো দ্বিতীয় বারের মতো এবার ফল দিয়েছে। প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণ কমলা ধরেছে। প্রতিটি ডালে ঝুলে আছে বাহারী সুমিষ্ট কমলা। কমলাগুলো হলুদ ও কাচা রঙের।
দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট মূল্যে টিকিট সংগ্রহ করে বাগান পরিদর্শন করছেন, কেউ ছবি তুলছে। অনেকেই বাগানে ঘুরে ঘুরে পছন্দের মতো কমলা সংগ্রহ করে কেজি দরে নগদ টাকায় ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজের পছন্দ মতো কমলা সংগ্রহ করতে পেরে ক্রেতার অনেক আনন্দিত। বাগানে বসেই কমলা বিক্রি করতে পেরে খুশি বাগান মালিকও।
দার্জিলিং কমলা কিনতে আসা সোহান বলেন, “গত বছর গণমাধ্যমের সংবাদে বিস্তারিত জেনে দার্জিলিং কমলা কিনতে বাগানে এসেছিলাম। এ বছর আগেভাগে চলে এসেছি। বাগান ঘুরে ঘুরে নিজ হাতে পছন্দ মতো কমলা সংগ্রহ করছি। প্রতি কেজি কমলার মূল্য নিয়েছে ৩০০ টাকা।”
তিনি বলেন, “নিজের হাতে কেমিক্যালমুক্ত কমলা সংগ্রহ করতে পেরে ভালো লাগছে। সঙ্গে আমার শিশুপুত্র আছে। সে অনেক আনন্দ পেয়েছে। আমার শিশুপুত্র কমলা বাগান ঘুরে দেখে নিজ হাতে কমলা সংগ্রহ করেছে।”
কমলা বাগান পরিদর্শন করতে এসেছেন সায়মা ইসলাম নামের ত্রিশোর্ধ এক নারী। তিনি বলেন, “ছেলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কমলা বাগান পরিদর্শন করতে এসেছি। বাগানের প্রধান ফটকে ৩০ টাকায় টিকিট সংগ্রহ করে বাগানে প্রবেশ করছি। বাগান ঘুরে দেখে খুবই বিমোহিত হয়েছি। অসাধারণ সুন্দর লাগছে।”
তিনি আরও বলেন, “এত সুন্দর কমলা বাগান নিজ চোখে না দেখলে কখনোই বুঝতে পারতাম না। এ আনন্দ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমার ছেলেমেয়েরা দার্জিলিং কমলা ডালে ডালে ঝুলতে দেখে খুবই আনন্দ করছে।”
বাগানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা সবুজ মিয়া বলেন, “গত তিন বছর পূর্বে ফলের মিশ্র বাগানে ১০০টি দার্জিলিং কমলা ও ৫০টি চায়না ম্যান্ডারিনা জাতের কমলার চারা রোপণ করা হয়। মিশ্র ফলের বাগানটির নাম রাখা হয়েছে তাওয়াক্কালনা ফ্রুট অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেড। চার উদ্যোক্তা মিলে এই বাগান শুরু করছেন।”
তিনি বলেন, “দার্জিলিং ও চায়না ম্যান্ডারিনা জাতের কমলা ছাড়াও বাগানে রয়েছে বিভিন্ন উন্নত জাতের আম, বল সুন্দরী বরই, সফেদা, জাম্বুরা, ড্রাগন, আঙ্গুর ছাড়াও বিভিন্ন জাতের ফল। গত এক সপ্তাহ ধরে বাগান থেকে কমলা বিক্রি শুরু হয়েছে। দার্জিলিং জাতের প্রতি কজি কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি এবং চায়না কমলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে।”
তিনি আরও বলেন, “এ বছর বাগানের প্রতিটি কমলা গাছে আশানুরূপ ফলন এসেছে। প্রতিটি দার্জিলিং কমলা ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে। এ বছর বাগানে প্রবেশের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা।”
উদ্যোক্তা ফারুক আহমেদ বলেন, “আমরা চার বন্ধু ১০ বছরের চুক্তিতে ছয় বিঘা জমি লিজ নিয়ে জমিতে বাগান শুরু করেছি। ক্রেতা সাধারণকে অরগানিক তরতাজা সতেজ ফল খাওয়ানোর উদ্দেশ্যেই এ বাগান করা। গত বছরের চেয়ে আশানুরূপ বেশি ফলন হয়েছে। ক্রেতারা বেশি বেশি কমলা কিনছেন। দামের বিষয়েও কারও আপত্তি নেই। সতেজ কেমিক্যালমুক্ত কমলা পেয়ে খুশি তারা। এ বছর দুই টন কমলা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।”
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, “ব্যক্তি উদ্যোগে দার্জিলিং কমলা চাষে ওই চার উদ্যোক্তা সফল। দার্জিলিং কমলার মান খুবই ভালো ও চমৎকার। কমলার আকার ও রঙ খুবই সুন্দর। তাদের এমন সাফল্য অন্যান্য কৃষকদের কমলা চাষে আগ্রহী করবে।”
তিনি আরও বলেন, “উপজেলায় কমপক্ষে আট হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। আমাদের এ আবহাওয়া দার্জিলিং কমলা চাষে বেশ উপযোগী হওয়ায় আকার ও রঙ চমৎকার হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”