সারা বাংলা

বগুড়ায় আলুর বীজ না পেয়ে কৃষকের সড়ক অবরোধ

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় দ্বিগুণ দামেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত আলু বীজ। অভিযোগ উঠে‌ছে বীজের ডিলারেরা সিন্ডিকেট করে অন্য উপজেলায় বিক্রি এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বেলা ১১টায় এক ঘণ্টাব্যাপী শেরপুর উপজেলা পরিষদের সামনে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শতাধিক কৃষকরা। পরে স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শেরপুর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ হেক্টর। এসব জমির জন্য আলু বীজ প্রয়োজন ৪ হাজার ৫০ মেট্রিক টন। উপজেলায় ৯ জন ডিলার আছে। তাদের মাধ্যমে ৭৬ থেকে ৭৯ টাকা কেজি দরে বীজ বিক্রয় হবে। ডিলারদের বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে, পৌর শহরের তালতলা এলাকার ফিরোজ আলম ২১০ মেট্রিক টন, মেসার্স মিঠু বীজ ভান্ডার ৪০ মেট্রিক টন, মকবুল হোসেন ২৫ মেট্রিক টন, তবিবুর রহমান ২০ মেট্রিক টন, বেলঘড়িয়া বাজারের রফিকুল ইসলাম ২৮০ মেট্রিক টন, বোডের হাটের আবু হান্নান সবুজ ২০ মেট্রিক টন, মতিউর রহমান ৯০ মেট্রিক টন, খন্দকারপাড়া আতিকুর রহমান টিটু ৩০ মেট্রিক টন, বেলঘড়িয়ার আরজু হোসেন মঞ্জু ২২০ মেট্রিক টন এবং মুরাদপুর বাজারের আব্দুল মজিদ ৮০ মেট্রিক টন।

ডিলাররা অবৈধভাবে শেরপুর উপজেলা থেকে বীজ নিয়ে গিয়ে কাহালুসহ অন্যন্য উপজেলায় বিক্রয় করছে বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেন। এছাড়াও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় ১৫০ টাকা কেজি দরে আলু বীজ বিক্রি করছে। বীজের অভাবে আলু চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে চাষিরা। তারা বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান ও কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা খাতুনের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি। উল্টো কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা খাতুন কৃষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ক‌রে‌ছেন কৃষকেরা জানান।

কচুয়াপাড়ার শিপন সরকার বলেন, ‘‘আমি ১২ বিঘা জমি আলু চাষ করি। বীজের সংকটের কারণে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা খাতুনের কাছে গেলে তিনি আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং বলেন আমি আলু বীজ নিয়ে বসে আছি।’’

কুসুম্বি ইউনিয়নের মালিহাটা গ্রামের ওমর ফারুক বলেন, ‘‘১৭ বিঘা জমি আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করেছি। বেলঘড়িয়ার ডিলার আরজু হোসেন মঞ্জুকে অগ্রিম টাকা দিয়েছিলাম আলু বীজের জন্য কিন্তু দাম বেশি হওয়াতে আমার টাকা ফেরত দিয়ে দালালের মাধ্যমে ৬ হাজার ৫০০ টাকা করে বিক্রয় করছে। আমরা প্রকৃত কৃষক আলু বীজ পাচ্ছি না।’’

উপজেলার দক্ষিণ পেঁচুল গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ‘‘আমি ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। এবার বীজের সংকটের কারণে ১২ বিঘা জমি চাষ করেছি। কিন্তু বীজের অভাবে এখনও জমি পতিত আছে। ডিলারের কাছে গেলে বীজ পাওয়া যাচ্ছে না।’’

মালেক, মজিবর, মাসুদ, কালাম, রজিব, জাহাঙ্গীরসহ অবরোধকারী অনেক কৃষক জানান, ডিলারদের নির্ধারিত দোকানে বীজ পাওয়া না গেলেও গোপনে দ্বিগুণ দামে বীজ বিক্রি করছে। রাতের আঁধারে ডিলাররা বীজ পাচার করছে। কৃষকেরা গত মঙ্গলবার রাতে ডিলার ফিরোজ আলম দুই ট্রাক বীজ আটক করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেয় কিন্তু তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তারা বলেন, ‘‘গতকালও অন্য জায়গায় আলু বীজ পাচার করতে নিলে আমরা আটক করি, তখন প্রশাসন গিয়ে বীজগুলো উদ্ধার করে ডিলার ফিরোজের ঘরে রেখেছে, সেগুলো আজ কৃষকের মাঝে বিতরণ করার কথা থাকলেও পদক্ষেপ না নেওয়ায় রাস্তায় নামতে আমরা বাধ্য হয়েছি।’’

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান সিন্ডকেটের কথা স্বীকার করে বলেন, বেশি দামে বিক্রির অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শুক্রবার ভ্রাম্যমাণ আদালতে একজন ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।