ফরিদপুরে শীত আসতে না আসতেই জমে উঠছে ফুটপাতের শীতবস্ত্রের দোকান। গরম কাপড় পরার মত শীত না পড়লেও এরই মধ্যেই নগরের ফুটপাতে শীতবস্ত্রের অস্থায়ী দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। গত কয়েক দিন থেকে জমজমাট বেচাকেনা। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের ক্রেতারা এসব দোকান থেকে শীতের কাপড় কিনতে ভিড় করছেন।
ফরিদপুর নিউমার্কেট ও পৌরসভার সামনের ফুটপাতের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, রাতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। একইভাবে হাজী শরীয়াতুল্লাহ বাজার, থানার মোড়, ফরিদপুর নতুন ও পুরাতন বাস স্টেশন, বাইতুল আমান বাজার, গজারিয়া মার্কেট, কমলাপুর রেলস্টেশন, চকবাজারসহ নগরের বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত ও মার্কেটগুলোতে শীতের কাপড়ের কেনাবেচা অনেক বেড়েছে।
ফরিদপুর বাইতুল-আমান বাজারের ফুটপাতের ব্যবসায়ী জাদু মিয়া বলেন, “আমরা বছরে দুই ঈদ ছাড়া শীত মৌসুমে বাড়তি ব্যবসা করার সুযোগ পাই। সারা বছর আবার এমন সুযোগ মেলে না।”
আরেক ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, “গত বছরও শীতবস্ত্রের মার্কেট জমজমাট ছিল। তবে এবার শীতের শুরুতেই ক্রেতারা শীতের কাপড় কিনছেন। তাই বিক্রিবাট্টাও এবার তুলনামূলক বেশি।”
ফরিদপুর নিউমার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীত উপলক্ষে তাদের কাছে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট টি-শার্ট ও সোয়েটার পাওয়া যায়। নিম্ন আয়ের মানুষজন যাতে এখান থেকে কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে পারে তাই এ দোকান বসিয়েছেন তারা।
তারা আরও জানান, গত বছর শীতে গরম কাপড়ের চাহিদা তুলনামূলক কম ছিল। এর পেছনে তারা যুক্তি দেন, গতবার শীত কম ছিল। ফলে বিক্রি কম হওয়ায় তারা লাভের মুখ দেখেননি। এবার শীত কিছুটা আগেভাগে এসেছে। এবার তারা লাভের আশা করছেন।
সাকেনের মোড় এলাকার বাসিন্দা সুমাইয়া পারভীন বলেন, “এবার একটু আগেভাগেই শীতের পোশাক কিনছি। বেশি শীত পড়লে তখন চাহিদা বেড়ে যায়, দামও তখন বেশি চান বিক্রেতারা। এখানে দরদাম করে বেছে কেনা যায়।”
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ডালিয়া ইসলাম অনন্যা বলেন, “এখানে কাপড়ের দাম তুলনামূলক অনেক কম। তাই এখান থেকেই শীতের বাজার করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি হোস্টেলে থেকে টিউশনি করিয়ে নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। মার্কেট থেকে নতুন পোশাক কিনতে এক হাজার থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা লাগে, সেখানে ফুটপাত থেকে ৫০-১০০ টাকার মধ্যে জ্যাকেট সোয়েটার কিনতে পারছি।”
এদিকে বরাবরের মতো এ বছরও আমদানি করা পুরনো শীতের পোশাকের পাশাপাশি নতুন ডিজাইনের পরিধেয় সামগ্রী মজুদ করেছেন দোকানিরা। তরুণ-তরুণী আর শিশু-কিশোরদের পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।
এছাড়াও শহরের লেপ-তোশকের দোকানে কারিগরেরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। যদিও ক্রমেই লেপ-তোশকের জায়গা দখল করে নিচ্ছে আমদানি করা নতুন-পুরনো কম্বল। ওজনে কম, টেকসই ও গরম হওয়ায় দিন দিন কম্বলের চাহিদা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ফরিদপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুসারে, আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়া কেমন যাবে, তার একটি পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এবার ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর এলাকায় তাপমাত্রা কমবে। এর প্রভাবে এই বছর বাংলাদেশে শীতকাল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দীর্ঘ হবে এবং শীতের তীব্রতাও বেশি হতে পারে।