বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘রাজশাহীর সমন্বয়ক’ দাবি করা সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বলে আখ্যায়িত করেছে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদল। সোহেল রানাকে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগও অস্বীকার করেছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বেলা ১১টায় রাজশাহী শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ আখ্যায়িত করে ছাত্রদল।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী শহরের কালেক্টরেট মাঠ ও মাদ্রাসা ময়দান এলাকায় সোহেল রানার ওপর দুই দফা হামলা হয়। বাঁশ ও হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয় তাকে। পরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সোহেল রানা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের জয়, রুহুল আমিনসহ ২০-২৫ জন দুই দফায় তাকে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছেন।
সোহেল রানার এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদল। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি।
তিনি বলেন, ‘‘এখন কেউ কেউ ভুয়া সমন্বয়ক সেজে নিজের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে জাসদ ছাত্রলীগের নেতা সোহেল রানা নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সে নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করলেও স্পষ্টত সে জাসদ ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা।’’
তিনি বলেন, ‘‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে দুটি গ্রুপ বিরোধে জড়ায়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সে ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে জাসদ ছাত্রলীগের নেতা সোহেল রানা রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কুৎসা রটনা করেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। অথচ, ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ছাত্রদলের সুনাম ও ঐতিহ্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে এমন ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক ঘটনায় ছাত্রদলকে জড়ানো হয়।’’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ, ছাত্রদলনেতা সুলতান আহমেদ রাহি, আদিউল ইসলাম সজিব, মাহমুদুল হাসান লিমন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির, সদস্য সচিব আহমেদ রায়হান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহীতে কোনো সমন্বয়ক পরিষদ গঠিত হয়নি। তবে, রাজশাহী কলেজের যেসব শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকেছেন, তাদের কেউ কেউ ‘রাজশাহীর সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। বৃহস্পতিবার হামলার শিকার ছাত্রনেতা সোহেল রানা তেমনই একজন। তিনি জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি।
ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে সোহেল রানা বলেছেন, ‘‘ওরা নিজেরাই ভুয়া। আন্দোলনের সময় ওরা ছিল না। এখন মনে করছে, ওরা ক্ষমতায় চলে গেছে। ওরা ছাত্রলীগের মতো পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হচ্ছে, যার কারণে আমার ওপর হাতুড়ি নিয়ে হামলা চালিয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের এক দোসরকে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেটা আটকিয়েছি। কিন্তু, ওই সময় রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলই ওই অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়েছিল টাকা খেয়ে। তারা এখন প্রতিনিয়ত ছাত্রদের নির্যাতন করছে। সম্প্রতি আমার এক ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে ছাত্রলীগ ট্যাগ লাগিয়ে বেইজ্জতি করছিল। আমি গিয়ে রক্ষা করি। আমি যে তাদের বিরুদ্ধে একটা শক্তি, সেটা তারা মানতে পারছে না।’’