ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু জয় করা সম্ভব। কারণ ভালোবাসার মধ্যে এক অমোঘ শক্তি রয়েছে। এই অনন্য শক্তির ওপর ভর করে মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে রচিত হতে পারে অনন্য বন্ধন। ভালোবাসার এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার জাড়গ্রামের আক্তারুজ্জামান-ফারিয়া দম্পতি।
এই দম্পতির কাছে পরম যত্নে বড় হচ্ছে বিদেশি জাতের সান ও এলেক্স নামে এক জোড়া টিয়া পাখি। আক্তারুজ্জামান কিংবা ফারিয়ার ডাক শুনলেই তাদের কাছে ছুটে আসে পাখি দুটি। এমন দৃশ্য দেখলে সত্যিই যে কেউ অভিভূত না হয়ে পারবেন না।
জানা গেছে, আক্তারুজ্জামান-ফারিয়া দম্পতি ভালোবেসে উত্তর আমেরিকার পাখি দুটির নাম রেখেছেন সান ও এলেক্স। এ গাছ ও গাছে করে বেড়ানো পাখি দুটি মালিকের ডাক শুনতেই ছুটে আসে কাছে। কখনো এই দম্পতির ঘাড়ে, কখনো বা মাথায় বা হাতে উড়ে এসে বসে দুই বছর বয়সী সান-এলেক্স।
আক্তারুজ্জামান ও ফারিয়া বলেন, “সান ও এলেক্সের ভালোবাসায় আমরা মুগ্ধ।”
গ্রামবাসী জানান, মাত্র ২৪ হাজার টাকা দিয়ে এক জোড়া সান-কুনুড় জাতের টিয়া কিনেছিলেন ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান। তখনো পাখি দুটির চোখ ফোটেনি। সেই থেকেই আক্তারুজ্জামান ও তার স্ত্রী ফারিয়ার সঙ্গে খাবার খায়, ঘুরে বেড়ায় সান ও এলেক্স।
ইমতিয়াজ আহমেদ নামে এক যুবক বলেন, “বিদেশি জাতের পাখি তারা (আক্তারুজ্জামান-ফারিয়া) পোষ মানিয়েছেন। এই পাখি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষরা আসেন। এই দম্পতি যেখানেই যাক না কেন সঙ্গে পাখি দুটিকে নিয়ে যান। ডাকলেই পাখি দুটি কাছে চলে আসে মালিকদের।”
মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলে আক্তারুজ্জামানের ঘাড়ে গিয়ে বসে পাখি দুটি
আক্তারুজ্জামানের প্রতিবেশী গোলাম মোস্তফা বলেন, “প্রায় ৪ বছর ধরে এই দম্পতি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি লালন-পালন করেছেন। তারা এমনভাবে ভালোবেসে পোষ মানিয়েছেন যে, ছেড়ে দেওয়ার অনেকক্ষণ পর নাম ধরে ডাক দিলে পাখিগুলো তাদের কাছে ছুটে আসে। পাখি দুইটা দেখতে খুবই সুন্দর। একদম সন্তানের মতো করে তারা পাখি লালন-পালন করেন।”
পাখি প্রেমিক ফারিয়া আক্তার রিয়া বলেন, “সান ও এলেক্সের ভালোবাসায় আমরা মুগ্ধ। ওরা আঙুর, আপেল এমনকি ভাতও খায়। ঘুমায়ও আমাদের সঙ্গে। ওরা আমার ভাষা বোঝে। কথার ইঙ্গিতও বোঝে। ওদের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছি। সান ও এলেক্স ছাড়া যেমন আমি থাকতে পারি না তেমনি ওরাও আমাদের ছাড়া থাকতে পারে না।”
তিনি আরো বলেন, “দিনের বেশিরভাগ সময় ওরা (সান-এলেক্স) আমার হাতে, মাথায়, ঘাড়ে বসে সময় কাটায়। ছেড়ে দিলেও যায় না। ডাকলে কাছে চলে আসে। আমি ওদের ভালোবাসা ও স্নেহ দিয়ে বড় করছি। ওদেরকে আমরা আদর করে বাবাই বলে ডাকি।”
সান ও এলেক্স
ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান বলেন, “পাখি লালন-পালন করার প্রধান কারণ হচ্ছে অবসর সময় কাটানো। মোবাইলের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পাখি লালন-পালন করা খুবই ভালো একটি দিক।’
তিনি বলেন, “পাখি পালন সহজ কাজ নয়। এদের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। শখ থেকেই মূলত পাখি লালন-পালন করি। সাড়ে ৩ বছর ধরে আমি পাখি পুষছি। সান-কুনুড় জাতের এই পাখি আমি দুই বছর ধরে পুষছি। ভবিষ্যতে একটি বড় পাখির খামার করার ইচ্ছা আছে।”
আক্তারুজ্জামান বলেন, “পাখিগুলো সবসময় আমাদের সঙ্গেই থাকে। রাতেও আমাদের কাছে ঘুমায়। কোথাও ঘুরতে গেলে আমাদের সঙ্গেই যায়। যখন মোটরসাইকেল চালিয়ে কোথাও যায় তখন ওরা ঘাড়ের উপর বসে থাকে।”