সাভারের আশুলিয়া থানায় জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে করা মামলাটি চাকরির প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাদী কুলসুম আক্তার।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) আশুলিয়া থানা হেফাজতে তিনি এ দাবি করেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মামলার বাদীসহ তিনজনকে কক্সবাজার থেকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
আরো পড়ুন: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, থানায় হাজির ‘নিহত’
কুলসুম আক্তার (২১) মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার সিংজুরীর আব্দুল খালেকের মেয়ে। অপর দুজন হলেন- ঘিওর থানার মৃত মাসুম আলীর ছেলে রুহুল আমিন (৬৪) ও একই জেলার শিবালয় থানার টেপড়া এলাকার মৃত মনসের আলীর ছেলে শফিউদ্দিন (৪০)।
গত ২৪ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামী আল আমিনকে হত্যার অভিযোগে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন কুলসুম। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি হিসেবে ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। গত ১৩ নভেম্বর আল আমিন মৌলভীবাজারের জুড়ী থানায় গিয়ে নিজের জীবিত থাকার বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে তাকে সাভার থানায় আনা হয়। এছাড়া, মামলা করে আদালতে হাজির হচ্ছিলেন না কুলসুম। পরে তার বিরুদ্ধে সমন জারি করেন বিচারক। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে আটক করে পুলিশ।
কুলসুম আক্তার জানান, তিনি তার স্বামী মো. আল আমিনের সঙ্গে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় থাকতেন। আল আমিনের বাবা নূরনবী ও মায়ের নাম কমলা বেগম। গত ২৮ আগস্ট তিনি সিলেট থেকে মানিকগঞ্জ চলে আসেন। পরে চাকরির খোঁজ করতে থাকেন তিনি। বাসে তার সঙ্গে পরিচয় হয় শফিউদ্দিনের। কথা বলার একপর্যায়ে শফিউদ্দিনকে চাকরি প্রয়োজন বলে জানান কুলসুম। একথা শুনে কুলসুমকে মুঠোফোন নম্বর দেন শফিউদ্দিন। কিছুদিন পর চাকরি হয়েছে জানিয়ে জন্মনিবন্ধন ও চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটের দিতে হবে বলে কুলসুমকে জানান শফিউদ্দিন।
কুলসুম জানান, ওই ঘটনার কিছুদিন পর ঢাকায় নিয়ে ৫ আগস্ট এক ব্যক্তির মারা যাওয়ার ঘটনার মামলায় কুলসুমকে বাদী করা হয়েছে বলে জানান শফিউদ্দিন ও রুহুল আমীন। কুলসুমকে নিহত ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে সবার কাছে পরিচয় দিতে বলেন তারা। অন্যথায় কুলসুমের ফাঁসি হবে বলে জানান। পরে আদালতে নিহত ব্যক্তিকে নিজের স্বামী বলে জানান কুলসুম। এরপর থেকে তারা (শফিউদ্দিন ও রুহুল) কুলসুমকে কক্সবাজার নিয়ে রাখেন।
তিনি জানান, এরমধ্যে একবার তিনি বাড়িতে ফিরলেও পরে শফিউদ্দিন ও রুহল আমীন আবারো তাকে কক্সবাজার নিয়ে যান। পরে আশুলিয়া থানা পুলিশ তাদের তিনজনকে হেফাজতে নেয়।
কুলসুম বলেন, “চাকরির প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে আমাকে মামলার বাদী করা হয়। আমি আসামিদের কাউকে চিনিনা। কে মারা গেছে আমি সেটিও জানি না।”
শফিউদ্দিন বলেন, “বাসে কুলসুমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তার চাকরির প্রয়োজন জানালে মোবাইল নম্বর দেই। চাকরির সুবাদে রুহুল আমিনের সঙ্গে কুলসুমকে পরিচয় করিয়ে দেই। মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”
কুলসুমকে আনা হয়েছে জানতে পেরে মামলার আসামি লিয়াকত দেওয়ান নামে এক ব্যক্তি আশুলিয়া থানায় উপস্থিত হন। মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা বলে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
লিয়াকত বলেন, “আমি ওই মামলার ৫৭ নম্বর আসামি। একটি মাধ্যমে জানতে পারি এ ঘটনায় রুহুল জড়িত। পরে রুহুলের ছেলে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একজনের মাধ্যমে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা চায়। পরে আমরা ১১ জন মিলে ১৭ লাখ টাকা দিয়েছি।”
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “মামলার বাদীসহ আরো দুই জনকে কক্সবাজার থেকে আশুলিয়া থানায় আমাদের হেফাজতে আনা হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য বাদীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”