চলতি আমনের মাঠ মনু ও ধলাই নদীর বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে অনেক খেত নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকের শঙ্কা ছিল এবার আমনের চাষ আর সম্ভব হবে না। তবে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে চারা সংগ্রহ করে আশায় বুক বেধে আবার রোপণ করেন। তাদের পরিচর্যায় আমনের ক্ষতিগ্রস্ত জমিতেই ভালো ধান হয়েছে। এখন হেমন্তের সোনালী রোদে ঝলমল করছে আমন ধানের সেই মাঠ।
মৌলভীবাজারের রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলার বন্যাকবলিত মাঠে মৃদু হাওয়ায় দুলছে সোনালী ধানের শীষ। যদিও বিলম্বিত চাষে লাভজনক হবে কি না এমন শঙ্কা রয়েছে কৃষকদের।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যার কারণে চলতি মৌসুমে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়নি। সারা জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর ও আগাম জাতের বিনা-১৭ ও ৭ ব্রি- ধান ৭১-৭৫সহ কিছু জাত টিকে আছে। তবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করায় শেষের দিকে আমনের বন্যাকবলিত জমিতে ধানের চারা লাগানোর পর এখন সোনালী ধানে মাঠ ভরে উঠেছে।
সরেজমিনে কমলগঞ্জের শ্রীনাথপুর, মুন্সিবাজারের রূপসপুর, শ্যামের কোনা এবং রাজনগরের বালিসহস্রা, বড়গাও, মনসুরনগর এলাকার খেতের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিলম্বে লাগানো ধানের শীষে বাতাসে ঢেউ খেলছে।
এ সময় স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, ৩ দফা বন্যায় প্রথমে হালি চারা নষ্ট হয়। পরে যখন রোপণ করি এসময় তলিয়ে যায় খেতের মাঠ। চলতি আমনে এমন বিপর্যয় ছিল। এবারের আমন চাষে আমাদের দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। পুনরায় আমন খেতের কোনো আশা ছিল না। হতাশা দুর করতে হালি চারা সংগ্রহ করে চাষ করেছি। মনে হচ্ছে ধান খারাপ হবে না। বড় গোছা দিয়েছে লম্বা শীষ আসছে। তবে চিটা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার শ্যামেরকোনা গ্রামের আব্দুল আহাদ বলেন, “২৫ বিঘা খেতের মধ্যে অর্ধেক জমি বানের পানিতে তলিয়ে যায়। মরা ধানের চারা গাছে কুশি বের হলে আশা জাগে। তখন আমরা মাঝে ফাকা স্থানে নতুন করে আরো চারা লাগাই। এতে ধানের গোছা বড় হয়ে এখন সেই গাছে শীষ দিয়েছে। ফসল হারানোর দুশ্চিন্তা অনেকটা কমে গেছে। খরচ বেশী হলেও ধারণা করছি ক্ষতি পুষিয়ে যাবে।”
রাজনগর উপজেলার বালিসহস্রা গ্রামের মোস্তফা মিয়া বলেন, “আমন খেতের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে দুরের স্বজনদের কাছ থেকে হালি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করি। খেতের মাঠে সোনালী ধান দেখে মনে প্রশান্তি আসছে।”
রাজনগর ঘরগাও গ্রামের আব্দুর রহীম বলেন, “৮ বিঘা জমির তিন বিঘা বানের পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পর ধান গাছ মাথা তুলে দাঁড়ায়। এতে আশাবাদী হয়ে ১৬ হাজার টাকা খরচ করে ফাকা স্থানে চারা রোপণ করি। এখন যদি আর কোনো বিপর্যয় না আসে তবে গোলায় ধান উঠবে।”
মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, “চলতি মৌসুমে আমাদের আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৯৮ হাজার হেক্টর। ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়নি। কৃষকের বিলম্বে রোপণ করা আমনের ফলন, পুষ্টিমান ও চিটা হবে কি না এমনটা যাচাইয়ের জন্য ১৪ হাজার হেক্টর জমি আলাদা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মনে হচ্ছে এবারের বন্যায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে।”