সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ী পাহাড়ের তিন কন্যা ঋতুপর্ণা চাকমা, রূপনা চাকমা ও মনিকা চাকমাকে বর্ণিল আয়োজনে সংবর্ধনা দিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে রাঙামাটির চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, রাঙামাটি রিজিয়ন, জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন ক্লাব ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এই ফুটবলারদের হাতে ফুল ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
এসময় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন খেলোয়াড়কে ১ লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া, জেলা পরিষদ ১ লাখ, সেনাবাহিনী এক লাখ, রাঙামাটি পৌরসভা ৫০ হাজার টাকা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় খেলোয়াড়দের।
এর আগে আজ সকাল ১০টার দিকে রাঙামাটির ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের তিন ফুটবলারকে নিয়ে মোটর শোভাযাত্রা বের হয়। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের পথ ধরে ও ব্যান্ড পার্টির মাধ্যমে শোভাযাত্রাটি শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় খোলা ট্রাকে দাঁড়িয়ে তিন ফুটবলার হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। পরে রাঙামাটি শহরের রাঙ্গাপানি-আসামবস্তি-তবলছড়ি-বনরূপা সড়ক হয়ে শোভাযাত্রাটি চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে এসে পৌঁছায়। এসময় স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা করতালিতে পাহাড়ি কন্যাদের বরণ করে নেন। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় সংবর্ধনা প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে তিন কৃতী ফুটবলারের ভিডিও ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়। পরে শেষে জেলা প্রশাসন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, রাঙামাটি রিজিয়ন, জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন ক্লাব, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা তিন ফুটবলারকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এসময় এই তাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ফিফার রেফারি রাঙামাটির কৃতী সন্তান জয়া চাকমাকেও সম্মাননাা জানানো হয়। শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করে সবার আশীর্বাদ চেয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা, রূপনা চাকমা ও মনিকা চাকমা।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, এই তিন কৃতী ফুটবলার আমাদের পাহাড়ের গর্ব। নারী সাফ টুর্নামেন্টে তাদের ফুটবলশৈলী দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছি। এজন্য আজকে তাদেরকে রাঙামাটিতে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। তাদের সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।
রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শওকত ওসমান বলেন, পরিশ্রম করলে সর্বোচ্চ শিখরে যাওয়া যায়, এই তিন কৃতী ফুটবলারকে দেখে আমাদের যুব সমাজ শিখতে পারে। তাদের এমন সাফল্য থেকে আমরা যাতে শিক্ষা লাভ করতে পারি। এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ-পরিস্থিতি বজায় থাকলে আরো কৃতী খেলোয়াড় উঠে আসবে আগামীতে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ অক্টোবর নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পয়ন হয় বাংলাদেশ। ফাইনালে মনিকা ও ঋতুপর্ণা চাকমা গোল করে জয়ে অবদান রাখেন। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন রাঙামাটির কাউখালীর মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা, টুর্নামেন্টে সেরা গোলকিপার নির্বাচিত হন রাঙাামাটির নানিয়ারচর উপজেলার মেয়ে রূপনা চাকমা। মনিকা চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায়। তিনজনই রাঙামাটির ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা ও খেলাধুলা করতেন। পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল টিমের সদস্য হন।