“বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে বলি। পরে বাসে উঠে দেখি একজন শিক্ষার্থীর নিথর দেহ পড়ে রয়েছে ফাঁকা জায়গায়। পরে কয়েকজন মিলে আগুনে পোড়া সেই মরদেহটি নিচে নামাই।”
শনিবার (২৩ নভেম্বর) গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) পিকনিকের বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাকির হোসেন এ কথা বলেন।
জাকির হোসেন বলেন, “আগুন আগুন চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে দৌঁড়ে রাস্তায় আসি। দেখি বাসে আগুন জ্বলছে। দ্রুত আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে অটোরিকশায় করে হাসপাতালে পাঠাই।”
তিনি আরো বলেন, “এমন ছোট সংযোগ সড়কে বিআরটিসির দোতলা বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী করে শিক্ষার্থীদের পিকনিকে নিয়ে এল? সড়কের সামান্য ওপরে বৈদ্যুতিক তার। এই সড়কে বৈদ্যুতিক তারের কারণে ছোট পরিবহন চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ। সেই সড়কে কী করে বিআরটিসির দোতলা বাস চলাচল করে?”
শামীম আহমেদ নামে অন্য একজন বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট দুই জনকে আমরা শুকনো বাঁশ দিয়ে আঘাত করে সরিয়ে আনি। পরে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ বন্ধ করতে বলি। তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। তা না হলে আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটতো।”
প্রত্যক্ষদর্শী আফসার উদ্দিন বলেন, “সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টেজের লাইনে পিকনিকের ৫ নম্বর বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৫৭০৩৮) বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের কারো হাত, কারো পা ও কারো মুখ ঝলসে যায়।”
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খন্দকার মাহমুদুল হাসান জানান, ওই লাইটি ১১ হাজার ভেল্টেজের ছিল। সড়কের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন ক্রস করা অবস্থায় রয়েছে। একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে দোতলা বাসটি একটু হেলে যাওয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) আফজাল হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিকের বাস বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এখন পর্যন্ত তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, বিআরটিসির ছয়টি দ্বিতল বাসে করে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ৪৬০ জন শিক্ষার্থী পিকনিক করতে গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি রিসোর্টে যাচ্ছিলেন। তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের আঞ্চলিক সড়কে একটি বাস বিদ্যুতায়িত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে অন্য ২ জনের মৃত্যু হয়।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘‘তিন শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।’’