সারা বাংলা

আইইউটির গাফিলতি দেখছেন নিহত সাকিবের স্বজনরা

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত শিক্ষার্থী জোবায়ের আলম সাকিবের স্বজনরা। 

গ্রামের রাস্তায় কেন উঁচু দ্বিতল বাস নেওয়া হয়েছিল সে প্রশ্ন তুলে তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। যারা এই গাফিলতি করেছেন তাদের শাস্তি হতে হবে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে আইইউটি পিকনিকের দোতলা বাস গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের আঞ্চলিক সড়কে বিদ্যুতায়িত হয়। এতে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এদের একজন জোবায়ের আলম সাকিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি রাজশাহীতে। গত সপ্তাহেই বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরেছিলেন সাকিব।

সাকিবের বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। সাকিবের মা ফজলেতুন্নেসা সেফা জেলার পবা উপজেলার মুরারিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এই দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে ছোট ছিলেন সাকিব। বড় মেয়ে নাইমাতুল জান্নাত শিফা একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ফাইনাল দিয়েছেন। শিফা থাকেন শ্বশুরবাড়ি। পড়ালেখার জন্য গাজীপুরে থাকতেন সাকিব।

মেধাবী সাকিব রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। দুই পরীক্ষাতেই সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আইইউটিতে।

আজ সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরের বাকীর মোড়ের চারতলা বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজনেরা ছুটে এসেছেন সাকিবের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেয়ে। সাকিবের বাবা, মা ও বোন গাজীপুরে গেছেন ছেলের মরদেহ আনতে। মাঝে মধ্যেই বাড়িটিতে আত্মীয়-স্বজনদের কান্নার রোল উঠছে।

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়া জোবায়ের আলম সাকিব

সাকিবের চাচি বিউটি বেগম বললেন, “সাকিবের মতো এত ভাল ছেলে আর হয় না।’ তিনি সাকিবের ঘরে নিয়ে গিয়ে দেখালেন, বিছানার ওপর এখনো জায়নামাজ পড়ে আছে। সেলফে থরে থরে সাজানো বই। একটা কম্পিউটারও রয়েছে। 

বিউটি বলেন, “সব পড়ে থাকল, ছেলেটাই আর থাকল না। তার মায়ের নানারকম অসুখ। অসুস্থ মানুষটা এই শোক সইবে কী করে!”

সাকিবের বোনের শ্বশুর নজরুল ইসলাম নওগাঁর মান্দার একটি কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘গ্রামের মধ্যে সফর করবে তাহলে দোতলা বাস কেন? গ্রামের রাস্তায় গাছের ডাল থাকবে, বিদ্যুতের লাইন থাকবে- এটাই তো স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চরম গাফিলতির পরিচয় দিয়েছে দোতলা বাস ভাড়া করে। এই দুর্ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

গ্রামের সরু সড়কে দ্বিতল বাস চলার অনুমতি ছিল কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আইইউটি’র উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, যারা পিকনিকের আয়োজন করেছে, তারা কেন দ্বিতল বাস নিল? ওই রাস্তায় তো (দ্বিতল বাস) চলাচলে অনুমতি ছিল কি না তা তার জানা নেই। 

তিনি বিআরটিসির ওপর দায় চাপিয়ে বলেন, “এটা তো ভালো জানার কথা বিআরটিসির। কারণ, তারা বাস ভাড়া দেয়। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।”