সারা বাংলা

কোনো কথা নেই পরিবারের, চিরনিদ্রায় সাকিব

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থী জোবায়ের আলম সাকিবের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারিপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় পরিবারের সাথে কথা বলতে চাইলে সাকিবের বোন নাইমাতুল জান্নাত শিফা জানান, এখন কোনো বিষয় নিয়েই কথা বলতে তারা আগ্রহী নন। কোনোরকম ‘ঝামেলা’ হোক তা তারা চান না। 

এর আগে শনিবার গভীর রাতে সাকিবের মরদেহ আনা হয়। এ সময় সেখানে নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে। সাকিবের মৃত্যুতে শোকাহত পুরো গ্রামের মানুষ।

সাকিবের মা ফজলেতুন্নেসা সেফা মুরারিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আর তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। আগে তাদের বাড়ি ছিল মুরারিপুর গ্রামেই। পরে তারা রাজশাহী নগরের বাকির মোড় এলাকায় একটি চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। 

সাকিব রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০২১ সালে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এএইচএসসি পাস করেন। এরপর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) ভর্তি হন। তৃতীয় বর্ষ চলছিল, পড়াশোনা আর শেষ হলো না। 

রোববার সকালে মুরারিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাকিবের এক চাচার বাড়ির সামনে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। সেখানে সাকিবের মা ফজলেতুন্নেসা সেফাকে নিয়ে বসে আছেন আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের নারীরা। সাকিবের মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বোন নাইমাতুল জান্নাত শিফা উঠে আসেন। তিনি জানান, এখন কোনো বিষয় নিয়েই কথা বলতে তারা আগ্রহী নন। কোনোরকম ‘ঝামেলা’ হোক তা তারা চান না। এখন তিনি শুধু ভাইয়ের জন্য দোয়া চান। 

শনিবার একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে গাজীপুরে ছুটে যান তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ও মা ফজলেতুন্নেসা সেফা। সঙ্গে যান সাকিবের বড় বোন নাইমাতুল জান্নাত শিফা। গভীর রাতে জোবায়ের আলমের লাশ নিয়ে তারা রাজশাহী শহরের বাসায় আসেন। সকাল ৭টায় জোবায়েরের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার লাশ নেওয়া হয় মুরারিপুর গ্রামে। রোববার সকাল ১০টায় গ্রামের কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।

এর আগে গতকাল (শনিবার) সকালে গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ৬টি ডাবল ডেকার বাস ও তিনটি মাইক্রোবাসে করে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে যাচ্ছিলেন।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো আঞ্চলিক সড়ক ধরে রিসোর্টের দিকে যাওয়ার সময় উত্তর পেলাইদ গ্রামের উদয়খালী বাজারে পৌঁছালে বিআরটিসির একটি ডাবল ডেকার বাস পল্লী বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লেগে যায়। এতে বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।