সারা বাংলা

‘ট্যাহা তো প্যাই নাই, উল্টা ম্যাইর খাইছি’

“বিনাসুদে এক লাখ থেকে কোটি টাকা ঋণ দিবো কইয়া ঢাকায় নিয়া গেছে। আমরা কি জানি ওইহানে আন্দোলন হইবো। বাস থাইক্যে (থেকে) নামতেও পারি নাই, ওই হানে (শাহাবাগে) যাওয়ার পরই দেখি মারামারি হইতাছে। কয়জন ছাত্ররা বাসে ওইঠা (উঠে) কয়জনরে লাঠি দিয়া বারি (আঘাত) দিছে, অনেকে মাইরও খাইছে। টাকা তো বড় কথা না, বাঁইচা আইছে হেইডাই কথা। ট্যাহা তো প্যাই নাই, উল্টা ম্যাইর খাইছি।” 

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জরিনা কলেজ এলাকার বাসিন্দা দবির হোসেনের বাসার সামনে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন একই উপজেলার মালঞ্চ গ্রামের রোকসানা আক্তার। তিনি বিনাসুদে ঋণ পাওয়া আশায় শাহবাগে যান। 

এদিকে, ঢাকায় লোকজন জড়ো করার অভিযোগে মানিকগঞ্জ শহরের জরিনা কলেজ এলাকার বাসা থেকে দবির হোসেন, হাসিনা আক্তার ও দবিরের স্ত্রী চামিলী আক্তারকে আটক করা হয়েছে বলে জানান মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস.এম. আমানুল্লাহ।

আরো পড়ুন: সমাবেশে নিতে সুদমুক্ত ঋণের প্রলোভন, লক্ষ্মীপুরে আটক ১১

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিনাসুদে লাখ টাকা থেকে কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে আজ সকাল ৬টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ জরিনা কলেজ এলাকার দবিরের ব্সার সামনে জড়ো হন। দবির ও হাসিনা আক্তার আগত মানুষদের সাতটি বাসে নিয়ে ঢাকার শাহবাগের উদ্দেশ্য রওনা হন। শাহাবাগ যাওয়ার পরে পরিস্থিতি খারাপ দেখে ওই বাসগুলোতে করেই মানিকগঞ্জ ফিরে আসেন তারা। 

এরপর দবির হোসেনে বাড়ি ঘেরাও করেন প্রলোভনে আসা মানুষরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে ঢাকার শাহাবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য লোকজন জড়ো করার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। 

ঋণের প্রলোভনে আসা নাজমা বেগম বলেন, ‘ড. ইউনূসের একটা সমাবেশ আছে ঢাকায়। সমাবেশ শেষে সাধারণ মানুষদের সুদমুক্ত এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হবে বলে দবির, হাসিনা ও তার স্ত্রী চামিলী আমাদের জানান। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দবিরের অফিসে দিয়ে যাই। এ সময় আমাদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। আজ সকালে জরিনা কলেজ থেকে ছয়টি বাসে আনুমানিক চার শতাধিক নারী-পুরুষ সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা হই। দবির এলাকার লোক। তাকে আমরা আগে থেকেই চিনি। এ জন্য তার কথায় আমরা প্রলুব্ধ হয়েছি।” 

খাদিজা বেগম বলেন, “গাড়ি থেকে ঢাকার শাহবাগে নামার পর সেখানকার লোকজন আমাদের মারধর করেন। পুলিশ আমাদের গাড়িগুলো ফিরিয়ে দেয়। এরপর আমরা মানিকগঞ্জ চলে আসি। আমরা টাকা ফেরত পাইনি। দবিরসহ সবার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”

মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস.এম. আমানুল্লাহ বলেন, “প্রতারক দবির হোসেন, হাসিনা আক্তার ও দবিরের স্ত্রী চামিলী আক্তারকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”