সারা বাংলা

ইটভাটায় পুড়ছে কৃষিজমির মাটি, ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় সচল রয়েছে ৩৪টি ইটভাটা। চলতি ইট উৎপাদন মৌসুমে এসব ভাটায় দেদারছে সরবরাহ করা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। দুই-তিন ফসলি জমির মালিকদের নানা প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করেও লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন জমির মালিকরা। উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। কৃষিজমির মাটি ইটভাটার পাশাপাশি সিরামিক কারখানাতেও যাচ্ছে। 

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক জানিয়েছেন, কাপাসিয়ার ১১টি ইউনিয়নে ২২ হাজার হেক্টরের বেশি কৃষিজমি রয়েছে। একটি চক্র কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটা ও সিরামিক কোম্পানিতে বিক্রি করছে। এতে কৃষিজমির উর্বরতা কমছে। ফলে, ফসলের উৎপাদন কমছে। ভালো ফলন না হওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। অনাবাদি পড়ে থাকছে অনেক কৃষিজমি। 

কাপাসিয়ার বারিষাব ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটা ও সিরামিক কারখানায় নেওয়া হয়েছে। এখানকার মাটি পাশের শ্রীপুর ও মনোহরদী উপজেলাতেও নেওয়া হচ্ছে। টোক, রায়েদ, কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন, ঘাগটিয়া, সনমানিয়া ও তরগাঁও ইউনিয়নেও ইটভাটায় পুড়ছে কৃষিজমির উর্বর মাটি। পাশাপাশি, লালমাটিয়ার টেক ও টিলাগুলোও কেটে বিভিন্ন সিরামিক কোম্পানিতে বিক্রি করছেন মাটি ব্যবসায়ীরা।

টোক ইউনিয়নের উজুলি দিঘীরপাড় গ্রামের বিধবা মরিয়ম বেগম বলেছেন, ‘‘মাটিখেকোরা প্রলোভন দেখিয়ে আমার উঁচু জমি পাশের নিচু জমির সমান করে দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু, পরে তারা জমিকে পুকুর বানিয়ে দিয়েছে। তাদের একটি চক্র আছে। প্রতিবাদ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’’

একই ইউনিয়নের প্রবীণ কৃষক মো. কামরুজ্জামান সবুর বলেন, ‘‘বিভিন্ন কারণে কৃষিজমির পরিমাণ এমনিতেই কমছে। তার ওপর মাটিখেকোদের প্রাদুর্ভাব জমিকে প্রাণহীন করে তুলছে। কৃষিজমিতে প্রাণ থাকলে কৃষকের প্রাণ বাঁচবে, বাঁচবে দেশের মানুষের প্রাণ। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে জমির উর্বর মাটি রক্ষা করতে হবে। কৃষিজমি রক্ষার স্বার্থে প্রশাসনকে আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’’

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘‘উপজেলাজুড়ে মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে। রাতে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে একটি চক্র। এই মাটিখেকো চক্রকে প্রতিহত করতে প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করছে পুলিশ।’’ 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘‘কৃষিজমির মাটি কাটা প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু, এতে তাদের প্রতিহত করা যাচ্ছে না। ভূমিমালিকদের, বিশেষ করে কৃষকদের সচেতন হতে হবে। এভাবে জমি থেকে মাটি কাটা আইনবহির্ভূত। ভূমি আইনে তাদের শাস্তির বিধান রয়েছে। এসব কাজে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’’