নাটোরের বড়াইগ্রামে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সামনে স্বামী উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলকে মারধর করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল রোববার রাতে ভুক্তভোগীর শ্বশুর কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডল মামলাটি করেন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
আরো পড়ুন: দেশে ‘মাফিয়া লীগের’ পুনরাবৃত্তি যেন না হয়: রিজভী
ভুক্তভোগী উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর শ্মশানঘাট এলাকার বিশ্বনাথ মণ্ডলের ছেলে।
মামলার আসামিরা হলেন- বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর মহল্লার বাসিন্দা ও পৌর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জালাল ভূঁইয়া (৩৮), পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুর আলম (৩২), সরদারপাড়ার বাসিন্দা ও বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন (৪৫), বনপাড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহাবুল আলম (৫৫), কলেজপাড়ার বাসিন্দা ও উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মুন্নাফ খান (৫০), মান্নান খান (৫২), পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সুজন (২৫), পাঠানপাড়ার বাসিন্দা ও পৌর যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৭), উপজেলা পরিষদ চত্বরের মো. রনি (২৮), মালিপাড়ার সলেমান মোল্লা (৪৫), কালিকাপুরের বাসিন্দা ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দুলাল কবিরাজ (৪৫), হালদারপাড়ার মো. শাহিন (৩৫) ও মো. নয়ন (৩২)। মামলায় নাম না জানা আসামি করা হয়েছে আরো ১৫ জনকে।
আরো পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সামনে স্বামীকে মারধরের অভিযোগ
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে আসামিরা তার মেয়ে জামাই উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে না পারায় তিনি (উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল) ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেন। গত ২০ নভেম্বর বিকেলে তিনি বাড়িতে যান। ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা উজ্জ্বলের বাড়ি ঘেরাও করেন। আসামি জালাল ভূঁইয়া উজ্জ্বলের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে পকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে নেন। বাকি টাকা দিতে না পারায় আসামিরা লোহার পাইপ ও রড দিয়ে পিটিয়ে উজ্জ্বলের বা হাত, বা পা ও বুকের হাড় ভেঙে ফেলে। রক্ষা করতে গেলে আসামিরা উজ্জ্বলের মাকে লাথি মেরে ফেলে দেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুবর্ণা মণ্ডল এগিয়ে গেলে আসামি জালাল ভূঁইয়া তাকে লাথি মারেন। একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান। আসামিদের হুমকির মুখে মামলা করতে কিছুটা দেরি হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মামলায় মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামি জালাল ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বড়াইগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলকে মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সঙ্গে চলাফেরা করায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও গত শুক্রবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি জানার পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল রোববার নাটোরে এসে ভুক্তভোগী ও বড়াইগ্রাম থানা-পুলিশের কাছে ঘটনাটির খোঁজ নেন। তিনি অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।