হবিগঞ্জ শহরে সরকারি আবাসিক এলাকার (স্টাফ কোয়ার্টার) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি শতবর্ষী খেলার মাঠকে জলাশয়ে পরিণত করা হয়েছে। সংস্কারের কথা বলে মাঠ থেকে মাটি তুলে এখন সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। মাঝখানে কয়েক ফুট উঁচু প্রাচীর দিয়ে মাঠকে দুই ভাগ করা হয়েছে।
জনপ্রিয় খেলার মাঠকে জলাশয়ে রূপ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারা এ মাঠকে আগের অবস্থায় ফেরত চান।
২০২২ সালের নভেম্বরে স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাসকারী সরকারি কর্মকর্তা ও তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তে মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি তুলে জলাশয় বানানো হয়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে স্থানীয় লোকজন আন্দোলন শুরু করেন এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বিষয়টি তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। তখন এ বিষয়ে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের সামনের অংশকে খেলাধুলার উপযোগী করতে মাটি কাটা হচ্ছে। নকশা প্রণয়ন করে মাঠ সংস্কার করা হবে।
কিন্তু, দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে চিত্র ভিন্ন। মূলত, মাঠকে পুকুরে পরিণত করে সেখানে এখন মাছ চাষ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২০২২ সালে মাঠের যে জায়গা থেকে মাটি তোলা হয়েছিল, সেখানে কার্পজাতীয় নানা জাতের মাছ রয়েছে। কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারের দিকে জলাশয়ের পাশে নানারকম সবজি চাষ করা হচ্ছে। মাঠের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে এপার-ওপার গাইডওয়াল দেওয়া হয়েছে।
সেখানে শাকসবজির পরিচর্যায় নিয়োজিত মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগেই সেখানে গাইডওয়াল নির্মাণ করা হয়।
অন্যদিকে, পুকুরের পর গাইডওয়ালের পশ্চিমে বিদ্যালয়ের দিকেও নতুন করে জলাশয় তৈরি করা হচ্ছে। আগের তুলনায় এ স্থানটি আরও কয়েক ফুট গভীর হয়েছে। শুধু বিদ্যালয়ের সামনে সামান্য জায়গা বাকি রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরের এ মাঠটি শত বছরের পুরাতন। ১৯৭৩ সাল থেকে এখানে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলসহ বিভিন্ন লীগ আয়োজন করা হতো। তবে, কয়েক বছর ধরে সংস্কারের অভাবে মাঠটি খেলার অযোগ্য হয়ে যায়। এখন এটিকে পুকুরে রূপান্তর করা হয়েছে।
তারা জানান, মাঠ সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকার তরুণসমাজ। কিন্তু, মাঠ সংস্কারের বদলে পুকুরে রূপান্তর করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
শহরের ইনাতাবাদ এলাকার বাসিন্দা সৌমিক খান বলেন, ‘‘আবাসিক এলাকার ভেতরে একটি পুকুর আছে। তারপরও খেলার মাঠ খননের মাধ্যমে দ্বিতীয় পুকুর তৈরি করা দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এটি নিন্দনীয় কাজ। এতে তরুণরা খেলাধুলার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেছেন, ‘‘ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠটি নষ্ট করা উচিত নয়। ২০২২ সালে জেলা প্রশাসন জানিয়েছিল, মাঠটি পরিকল্পিতভাবে সংস্কার করবে। সংস্কারের নামে এটিকে জলাশয়ে রূপান্তর করা ঠিক হয়নি। নকশা অনুযায়ী আমরা মাঠ সংস্কারের দাবি জানাই।’’
এ ব্যাপারে কথা বলতে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রভাংশু সোম মহানের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রিয়াঙ্কা পালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিস্তারিত জেনে তার পর কথা বলতে পারব।’’