শীতের প্রথম হিমেল পরশে কক্সবাজারে লেপ-তোশকের চাহিদা বেড়েছে। শহরের অলিগলিতে উষ্ণতা সামগ্রীর দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। আর এসব শীতবস্ত্র তৈরিতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। শীতের নতুন আমেজে লেপ, তোশক এবং কম্ফোর্টার বিক্রির মধ্যদিয়ে ব্যবসায়ীক ব্যস্ততা যেন উৎসবে রূপ নিয়েছে। লেপ-তোশকের দোকানিদের মতে, এ বছর শীত একটু আগে আসায় চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) কক্সবাজার শহরের বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লেপ-তোশকের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। এছাড়া বিভিন্ন কারখানায় দেখা গেছে তুলা ও ফাইবার দিয়ে লেপ তৈরি থেকে শুরু করে তোশক ও কভার তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে।
মদিনা মেট্রেস স্টোরের পরিচালক আরাফাত আলী বলেন, ‘‘বড় রেডিমেট তোশক ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। এই তোশকগুলো যদি অর্ডার করে তাহলে ১ হাজার ৫শ টাকা পড়ে। এছাড়াও চায়না মেট্রেস সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার এর মধ্যে পাওয়া যায়।’’
তিনি বলেন, ‘‘একটি বড় আকারের তোশক তৈরি করতে প্রায় ১৫ কেজি তুলা লাগে। আমরা প্রতি কেজি তুলা ৪৫ টাকা করে কিনি। আর তোশক তৈরির মজুরী হিসেবে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দেই।’’
আরাফাত আলী আরও বলেন, ‘‘সাধারণ কম্বলের পরিবর্তে এখন কম্ফোর্টারের চাহিদা বেশি। প্রতিটি কম্ফোর্টার ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৭শ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে শীতের শুরুতে ভালো বেচা-বিক্রি হচ্ছে।’’
জিয়া ট্রেডার্সের ম্যানেজার ওয়াসিফ উদ্দিন মাহিম বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে তোশক আর মেট্রেস। বড় তোশক দৈর্ঘ্যে ৭ ফুট, প্রস্থ ৬ ফুট হয়। যার মূল্য একদাম ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা। মাঝারি তোশক দৈর্ঘ্যে ৭ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট হয়। এর মূল্য ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। আমাদের নিজের বানানো মেট্রেস ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। আর বিভিন্ন কোম্পানির মেট্রেস সাড়ে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।’’
আরও কয়েকজন দোকানি বলেন, এখন লেপ তোশক ও শীতকালীন বিভিন্ন বস্ত্রের প্রচুর বিক্রি ও অর্ডার হচ্ছে। প্রতি বছর এই সময়টা আমাদের জন্য সেরা মৌসুম। তুলার দাম কিছুটা বাড়লেও বিক্রি ভালো হচ্ছে। গুণগত মান বজায় রাখতে আমরা বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছি।
এদিকে শীতের শুরুতেই ক্রেতারা তাদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পরিবারের জন্য শীতের লেপ কিনতে এসেছেন অনেক ক্রেতা।
জুবায়ের আহমদ নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘‘ঘরের পুরনো লেপগুলো আর ব্যবহারযোগ্য নেই। নতুন লেপ কিনতে এসেছি। তুলার লেপ কেনার পাশাপাশি এবার ফাইবারের লেপও কেনার ইচ্ছা আছে, কারণ এটা হালকা ও আরামদায়ক।’’
শর্মিলা রাণী নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘‘শীত শুরু হয়েছে। এসময়ে প্রতিটি দোকানে ভালো মানের লেপ থাকা জরুরি। দাম কিছুটা বেশি হলেও সাশ্রয়ী কিছু কিনতে চাই। এই শীতে কেনাকাটা একটু বেশি করতে হবে। ইতোমধ্যে দর কষাকষি করে লেপ, তোশক ও কম্ফোর্টার কিনেছি।’’
বর্তমানে বাজারে তুলা এবং মাইক্রো ফাইবারের লেপের চাহিদা বেশি। বিশেষ করে সিল্ক বা ডিজাইন করা লেপের দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। দোকানিরা বলছেন, শীতের তীব্রতা অনুযায়ী চাহিদা আরও বাড়বে।
এদিকে লেপ-তোশক তৈরি করতে কারিগররা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। শহরের নূরপাড়ার সোলায়মান উদ্দিন নামের এক কারিগর বলেন, ‘‘এই সময়ে আমাদের বিশ্রাম নেই। কর্মব্যস্ততায় চলে যায় সময়। শীত এলেই দোকানিদের মুখে হাসি ফুটে। পাশাপাশি আমাদের আয়ও বেড়ে যায়।’’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেপ-তোশকের ব্যবসা মৌসুমভিত্তিক হলেও এটি গ্রামের অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তুলার দাম বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচ বাড়লেও ক্রেতারা মানের সঙ্গে আপস করছেন না।
শীত যত গভীর হচ্ছে, লেপ-তোশক ব্যবসা ততই প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। ক্রেতাদের ভিড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। শীতের এই মৌসুমে লেপ-তোশক ব্যবসায়ীদের জন্য আয় এবং কাজের চাপ সমানভাবে বেড়ে যাচ্ছে। মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রমাগত বেচা-বিক্রি হওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।