সারা বাংলা

তীব্র ব্যথায় নির্ঘুম রাত কাটছে সাংবাদিক জাভেদের

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময় লাগা দেহজুড়ে ১৬টি ছররা বুলেটের আঘাত সেরে উঠলেও, ডান হাতে এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যথার তীব্র যন্ত্রণা। শরীরে পরপর দুইবার অস্ত্রোপচারের গভীর ক্ষত শুকিয়ে গেলেও হাতটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে তার। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাতের তীব্র ব্যথা তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। ব্যথা কমাতে গাইবান্ধা শহরের এসকেএস হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি সেন্টারে গত তিন সপ্তাহ ধরে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন সাংবাদিক জাভেদ হোসেন। 

চিকিৎসকরা বলছেন, জাভেদের ডান হাত দিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে পারবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তার আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। 

গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সমর্থনে গাইবান্ধায় রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। তারা মিছিল নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিকসহ অন্তত দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তিন সাংবাদিককে গাইবান্ধা শহরের বেসরকারি হাসপাতাল এসকেএস এ ভর্তি করা হয়। 

সেখানে সাংবাদিক রিপন আকন্দের শরীর থেকে দুটি, সাংবাদিক সুমন মিয়ার শরীর থেকে পাঁচটি ও সাংবাদিক জাভেদ হোসেনের শরীর থেকে ১৪টি ছররা গুলি বের করা হয়। পরে এক্সরে রিপোর্টে দেখা যায় সাংবাদিক জাভেদ হোসেনের ডান হাতে আরও দুটি গুলি রয়েছে। এরপর সপ্তাহখানেক পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সাংবাদিক জাভেদের ডান হাতের কব্জি থেকে দুটি ছররা গুলি বের করা হয়। 

অপারেশনে গুলি অপসারণ হলেও এখন পর্যন্ত তীব্র ব্যথায় জর্জরিত তার ডান হাত। ভারী কিছু তোলা তো দূরের কথা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেও কষ্ট হয় সাংবাদিক জাভেদের। 

গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক জাভেদ হোসেন বলেন, “গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে মারাত্মকভাবে আহত হই। সেদিন আমার শরীরে ১৬টি ছররা গুলি লাগে। তারপর থেকে আমার ডান হাতের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, এখনো সেরে উঠতে পারিনি। আমার হাতের ক্ষত সারানোর জন্য ইতিমধ্যে গাইবান্ধা এসকেএস হাসপাতালে দুই দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এছাড়া রংপুরের একাধিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাতেও তেমন কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে আমি গাইবান্ধার এসকেএস হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি ডান হাত দিয়ে ভারী কোনো কাজ করতে পারি না। দিনের বেলা কোনোভাবে কেটে গেলেও রাতে শুরু হয় তীব্র ব্যথা। ব্যথায় ঘুমাতেও পারি না।” 

সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাভেদ হোসেন বলেন, “সহযোগিতা তো দূরের কথা, কেউ খোঁজ পর্যন্ত নেননি। তবে, জেলা তথ্য অফিস থেকে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি।” 

গাইবান্ধা এসকেএস ফাউন্ডেশনের মানব সম্পদ বিভাগের সমন্বয়কারী রিজভান রাফিউল হক বলেন, “নির্বাহী প্রধানের  নির্দেশনা অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ ছাত্র-জনতা ও সাংবাদিকদের পাশে মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা ছিলাম। তাদের সকল চিকিৎসা ও অপারেশন আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করেছি, যাতে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও কাজে ফিরতে পারেন।” 

তিনি আরও বলেন, “আমাদের সহায়তা পাওয়া আহতদের মধ্যে একজনের চোখ গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। আর সাংবাদিকদের মধ্যে সর্বাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জাভেদ হোসেন। তার চিকিৎসা আমরা এখনো অব্যাহত রেখেছি।” 

এ ঘটনায় জানতে চাইলে জেলা তথ্য কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ আবির বলেন, “ছাত্র আন্দোলনে আহতদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই সরকার তাদের সহযোগীতায় পদক্ষেপ নেবে।” 

গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অমিতাভ দাশ হিমুন বলেন, “জাভেদ একজন পেশাদার সাংবাদিক। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে জাভেদসহ গাইবান্ধার কয়েকজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধসহ গুরুতর আহত হন। অন্যরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলেও জাভেদের ডান হাত এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। তার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।”