শেরপুরের মুর্শিদপুরে দোজা পীরের দরবারে সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত হাফেজ উদ্দিন পুলিশের কাছে আটক অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
হাফিজ উদ্দিন সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কান্দাশেরীরচর এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে। তিন সন্তানের জনক হাফিজ উদ্দিন পেশায় কাঠের ব্যবসায়ী ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, যে কোনো সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা সতর্ক রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) ভোরে সদর উপজেলার লছমনপুরে মুর্শিদপুর খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে একদল লোক হামলা চালায়। এ সময় পীরের ৬ অনুসারী এবং কওমি মাদ্রাসাপন্থি স্থানীয়পক্ষের ৭ জন আহত হয়। এ সময় পীরের লোকজন ৭ জনকে মেরে গুরুতর আহত করে আটকে রাখে। দরবারের টয়লেট থেকে সেনা সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। এ ঘটনায় রাতেই দরবারের এক খাদের থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশি প্রহরায় চিকিৎসা চালিয়ে যায়। এর মধ্যে হাফেজ উদ্দিনের অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে তার মৃত্যু হয়। বাকিদের মধ্যে আরও দুইজনের অবস্থার অবনতি হলে তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে মুর্শিদপুর দরবার শরীফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়ে আসছিলেন সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের জামতলা এলাকার ফারাজিয়া আল আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলামসহ স্থানীয় কওমি মাদ্রাসাপন্থি ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। তাদের দাবি, দরবারে এমন কিছু হয়, ইসলাম এমন কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। এই কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে বারবার উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনাও হয়। মাদ্রাসা ও লছমনপুর এলাকাবাসীর ব্যানারে পীরের দরকার বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ-সমাবেশও হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দরবারে হামলা হয়ে থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ দরবারে শরীয়তপরিপন্থি কার্যকলাপ হচ্ছে। আমরা এমন কাজ বন্ধ করতে অনেকবার অনুরোধ করেছি। চলমান সংকট সমাধানের কথা বলে দরবারে ডেকে নিয়ে আমাদের উপর পীরের লোকজন হামলা করেছেন। ওই হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাফেজ উদ্দিন আজ মারা গেছেন।’’ তিনি এ হত্যার হত্যার বিচার চান।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দরবারের খাদেম ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘‘তারা শেষ রাতে অতর্কিত হামলা ও ডাকাতি করতে আসে। আমরা ভিতরে ১০-১৫ জন ছিলাম। পরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকার লোকজন আনি। ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনি দিয়েছে। পরে এলাকাবাসী তাদের আর্মির কাছে দিয়ে দেওয়ার পর মৃত্যুর কথা শুনেছি।’’
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। আমাদের আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’’