নরসিংদীর বিখ্যাত মালেক মামার এক ভাপা পিঠার দাম ১ হাজার টাকা। দাম বেশি হলেও ক্রেতার কমতি নেই। দোকানে ভোজনরসিকদের উপচে পড়া ভিড়। শীত যত বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেচাকেনা। দম ফেলারও সুযোগ নেই মালেক মামার।
‘মালেক মামা’ হিসেবে অধিক পরিচিত মালেক মিয়ার আছে আরেক গুণ। তিনি তার পিঠার দোকান থেকে আয় করা অর্থের তিন-চতুর্থাংশ বিলিয়ে দেন এতিমখানা, মসজিদ ও মাদরাসায়।
রকমারি সব উপাদান দিয়ে ভাপা পিঠা তৈরি করেন মালেক মামা। তাই, অন্যান্যের চেয়ে তার পিঠার দামও বেশি। ৫০ থেকে ১ হাজার টাকার ভাপা পিঠা পাওয়া যায় মালেকের দোকানে।
স্থানীয়রা তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনরসিক মানুষ আসেন মালেক মামার দোকানে। সুস্বাদু ভাপা পিঠা খেতে হাজার টাকা খরচ করতেও আপত্তি নেই তাদের। ক্রেতারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বানানো পিঠার আকার দেখে তারা হতবাক। স্বাদও অন্য রকম। এমন পিঠা খেলে হাজার টাকাও উসুল হয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নরসিংদী সদরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভেলানগর জেলখানা মোড় ওভারব্রিজের নিচে ছোট পিঠার দোকান মালেকের। দুই জোড়া মাটির চুলায় বসানো বিশেষ পাতিলে গরম পানির ভাপ উঠছে। সেই ভাপেই তৈরি হচ্ছে পিঠা। আতপ চালের গুঁড়া, নারিকেল কোরা, গুড়, খেজুরসহ হরেক রকম বাদাম দিয়ে তৈরি হচ্ছে একের এক পিঠা। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে পিঠা কিনছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ক্রেতারা। সন্ধ্যার পর ৩ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার পিঠা বেচাকেনা হয় দোকানটিতে।
শীতকাল ছাড়া বছরের অন্য সময়ে সকালে রিকশা ও রাতে পানের দোকান চালান মালেক মিয়া।
মালেক মামার ভাপা পিঠা খেতে ঢাকা থেকে আসা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘‘ফেসবুকে প্রথম দেখেছিলাম মালেক মামার বিশাল আকারের ভাপা পিঠা। এর পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, খেতে হবে এই পিঠা। দুজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চলে এলাম পিঠা খেতে। এখন পর্যন্ত দুটো পিঠা খেয়েছি আমরা তিনজন মিলে। সবকিছু মিলিয়ে পিঠাটা অসাধারণ। কিসমিস, বাদামসহ অন্যান্য রকমারি উপাদানের মিশ্রণে পিঠার স্বাদ যেন তিন গুণ বেড়ে গেছে।’’
ভৈরব থেকে আসা রুবেল আহমেদ বলেন, ‘‘দুই ঘণ্টা বাইক চালিয়ে এসেছি পিঠা খেতে। এর আগেও কয়েকবার এসেছি। মালেক মামার পিঠার স্বাদ এত ভালো যে, মুখ থেকে সরাতে পাচ্ছি না। শীতের সময় গরম গরম ভাপা পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে। মালেক মামার দোকানে আমি সব সময় ৫০০ টাকা দামের পিঠাটাই খাই।’’
স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘‘দোকানটি পিঠার আকার ও উপাদানের ভিন্নতার কারণে ভোজনরসিকদের মন কেড়েছে। পিঠা তো অনেকেই বানান। তবে, মালেক মিয়ার মতো কয়জন পারেন?’’
তিনি জানান, মালেক মিয়া তার দোকানের তিন-চতুর্থাংশ আয় বিলিয়ে দেন এতিমখানা, মসজিদ ও মাদরাসায়।
পিঠা বিক্রেতা মালেক মিয়া বলেন, ‘‘আমি সব সময় চেষ্টা করি, পিঠা তৈরি ক্ষেত্রে ভালো জিনিস ব্যবহার করে মানুষকে খাওয়ানোর। কাজুবাদাম, কিসমিস, পেস্তাসহ অনেক উপাদান দিয়ে পিঠা তৈরি করি। এ পিঠা তৈরির টাকা দিয়ে আমার সংসার চলছে। পাশাপাশি, পিঠা বিক্রির আয়ের টাকা থেকে চার ভাগের তিন ভাগ আমি মাদরাসা, মসজিদ ও এতিমখানায় দান করি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাকে নকল করে অনেকেই পিঠা তৈরি করছে। তবে, যারা একবার আমার পিঠা খেয়েছে, তারা আমার কাছে দৌড়ে আসে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, ঢাকাসহ দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এসে আমার পিঠা খান।’’