সারা বাংলা

রংপুরে বীজ আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী, চাষে বিমুখ কৃষকরা

বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আলুর দাম। ঘাটতির অজুহাতে পিছিয়ে নেই আলু বীজও। গত বছরের তুলনায় রংপুরে এবার কৃষকদের অতিরিক্ত ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুনতে হচ্ছে ভিত্তি বীজ কিনতে। উৎপাদন খরচ বাড়ার শঙ্কায় আলু চাষে তাই অনেক কৃষক বিমুখ হচ্ছেন।

কৃষকদের অভিযোগ, আলুর বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রেতারা খেয়ালখুশি মতো বীজের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। তাছাড়া সার-ওষুধসহ অন্যান্য অনুষঙ্গের বাড়তি দামের কারণে বেড়ে যাচ্ছে আলুর উৎপাদন খরচ। বেশি টাকা খরচ করে ফসল আবাদ করে তারা লাভবান হতে পারবেন না। 

কৃষি বিভাগের দাবি, বীজ আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং চলছে। 

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুরে আলু বীজের চাহিদা এক লাখ ৬৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টনের মতো। এর বিপরীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) জোগান মাত্র ২ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন‌‌। বেসরকারি কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে ৫ হাজার ৮২৫ মেট্রিক টন। এ ছাড়া হিমাগারগুলোতে মজুত আছে ৭০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। অর্থাৎ বীজ আলুর ঘাটতি অর্ধেকেরও বেশি।

বিএডিসি কেজিপ্রতি বীজ আলু ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলো ৭০ থেকে ৮০ টাকা দর নির্ধারণ করলেও ডিলারদের কাছ থেকে কৃষকদের কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়।

বীজ পাওয়া না গেলে আলুচাষ বাদ দেওয়ার কথা জানান মমতাজুর রহমান জিল্লাল নামে এক কৃষক। তিনি বলেন, ‍“বাজারে আলুর বীজ পর্যাপ্ত পরিমাণে মিলছে না। বীজ না পেলে তামাক চাষ শুরু করব।”

জমিতে আলুর বীজ রোপণ করছেন নারীরা

পীরগাছা উপজেলার দেউতি এলাকার কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, “গতবারের চেয়ে আলুর ভিত্তি বীজের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তােই জমি আবাদ না করে লিজ দিয়েছি।”

এসমাইল হোসাইন নামে অপর কৃষক বলেন, “গতবার চার একর জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। এবার ভিত্তি বীজসহ অনান্য খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এক একর জমিতে চাষাবাদ করার পরিকল্পনা করছি।”

রংপুর বিএডিসির উপ-পরিচালক মো. মাসুদ সুলতান বলেন, “হিমাগারের সংকটের কারণে কৃষকদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বীজ আলু সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।”

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, “বীজ আলু অতিরিক্ত দামে কেউ বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কাজে সহায়তা করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা-উপজেলা প্রশাসন।”

চলতি মৌসুমে চাহিদার মাত্র ২ দশমিক ০ শতাংশ আলু বীজ সরবরাহ করছে বিএডিসি, ৩ শতাংশ সরবরাহ করছে বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলো। চাহিদার বাকিটা নিয়ন্ত্রণ করছে হিমাগার পর্যায়ের মজুতদাররা বলে অভিযোগ করেছেন আলু চাষিরা।