সারা বাংলা

জেলারের বিরুদ্ধে ফাঁসির আসামি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিনের বিরুদ্ধে। গত ১২ নভেম্বর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। 

কারা সূত্রের দাবি, ওই দুই আসামিকে অবমুক্ত করার নেপথ্যে বড় ধরনের লেনদেন থাকতে পারে। দুই আসামিকে আবারও গ্রেপ্তার করতে লক্ষ্মীপুর আদালত থেকে পরোয়ানা জারি হয়েছে। 

জেলার আব্দুল্লাহিল আল-আমিন বলেন, “লক্ষ্মীপুরের আদালতের নির্দেশে দুই আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়। তারা ওই আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের স্থগিতাদেশের বিষয়টি আমার ‘নলেজে’ ছিল না। লেনদের বিষয়টি একেবারে মিথ্যা অভিযোগ।”

ছাড়া পাওয়া আসামিরা হলেন- লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মনা ব্যাপারীর ছেলে সানাউল্লাহ এবং নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার আব্দুল গনির ছেলে আবদুর রহিম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানার ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর সানাউল্লাহ, আবদুর রহিম, মো. হারুন, আবুল কাশেম ওরফে কাশেম মাঝিসহ চার জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। এ মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চার আসামির ফাঁসির আদেশ হয়। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রায় কার্যকরের জন্য সানাউল্লাহ (কয়েদি নং-৮৫৯০) এবং আবদুর রহিমকে (কয়েদি নং- ৮৫৯১) কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়।

এদের মধ্যে সানাউল্লাহ লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরবসু গ্রামের মনা বেপারীর ছেলে এবং আবদুর রহিম নোয়াখালী জেলার সুধারাম উপজেলার আন্ডারচর গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে। অন্য দুই আসামি মো. হারুন (কয়েদি নং- ৮৫৯২) ও আবুল কাশেম ওরফে কাশেম মাঝিকে (কয়েদি নং- ৮৫৯৩)। তাদের গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে পাঠানো হয়। 

কর্মকর্তা বলেন, জেল আপিলে আসামিপক্ষ খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আদালত চার আসামিকে খালাস দেন। তাদের খালাস আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেলাল আহমেদও উচ্চ আদালতে আপিল করেন। পরে আদালত আসামিদের মুক্তির আদেশের ওপর ৮ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।

এ আদেশের কপি উচ্চ আদালত থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার ও লক্ষ্মীপুরের আদালতে পাঠানো হয়। লক্ষ্মীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক চলতি বছরের ৬ নভেম্বর আসামিদের খালাসের আদেশ দেন। কিন্তু এ সময় উচ্চ আদালতের ৮ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ ছিল।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের আদেশের ছয়দিন পর গত ১২ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ আসামিদের মুক্তির ব্যাপারে আদালতের চূড়ান্ত খালাস আদেশটি পান। ওইদিন কারাগারের ডেপুটি জেলার তৌহিদুল ইসলাম লক্ষ্মীপুরের সংশ্লিষ্ট কোর্টের বেঞ্চ সহকারী জহুরুল আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে আসামিদের মুক্তির আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত হন। উচ্চ আদালতের ৮ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা চলমান থাকা অবস্থায় ওই দিনই (১২ নভেম্বর) দুই আসামি সানাউল্লাহ ও আবদুর রহিমকে কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পেয়েই আসামিরা আত্মগোপনে চলে যান। 

শুক্রবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর আদালতের বেঞ্চ সহকারী জহুরুল আলমের কাছে মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যা জানার কুমিল্লা কারাগার থেকে জানেন। এ বিষয় বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না।”

চট্টগ্রাম কারা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান বলেন, ‘বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। এ বিষয়ে কার ভুল ছিল বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেহেতু আদালত আবারো প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন তাই আত্মগোপনে যাওয়া দুই আসামিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”