জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ময়মনসিংহ বিভাগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ৫৫ পরিবারকে আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে ৫৫ জন শহিদ পরিবারের হাতে অনুদানের চেক প্রদান করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুদানের চেক পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন শহিদ পরিবারের সদস্যরা। সবসময় পাশে থেকে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন সমন্বয়ক সারজিস আলম।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহ বিভাগে শহিদ হন ৯৩ জন। আহত হন আরও অনেকে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।
একমাত্র সন্তানের পড়াশোনার জন্য ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন নগরীর পুরোহিত পাড়ার সামিরা জাহান মনি। থাকতেন ঢাকার আজিমপুরে। ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহিনকে ভর্তি করিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। আজিমপুরে ৪ আগস্ট ছেলের মাথায় দুটি গুলি লাগে ওইদিন রাত ১২ টায় সে হাসপাতালে মারা যায়। এরপর সবকিছু গুটিয়ে ময়মনসিংহ চলে আসেন।
অনুদানের চেক পেয়ে দুচোখের পানি ফেলে সামিরা জাহান মনি বলেন, “একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আজ আমি একাকীত্ব জীবন যাপন করছি। সন্তানের রক্তে যে দেশ পেয়েছি সেটা ভালো চলুক, এর চেয়ে আর চাওয়ার কিছু নেই।”
অনুষ্ঠানে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আহত এবং শহীদদের সঠিক তথ্য সংগ্রহে কাজ করার কথা জানিয়ে তাদের পাশে সবসময় থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন সারজিস আলম।
তিনি বলেন, “শহিদ এবং আহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে আমাদের এ ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়েছে। আপনারা সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। হাসিনা সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাত্র দুই কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জেল খাটিয়েছেন। আমরা আমাদের ফাউন্ডেশনের হিসেব সঠিক না রাখলে ২০ বছর পরেও যদি শেখ হাসিনার দোসররা ক্ষমতায় আসে তাহলে এই কারণে আমাদের জেলে যেতে হবে। তাই এটিকে একটি শক্তিশালী স্বচ্ছ ফাউন্ডেশন করতে চাই।”
তিনি বলেন, “হাসিনা এবং তার দোসররা সবসময় চেষ্টা করছে আমরা যেন ব্যর্থ হই। আর আমরা ব্যর্থ হলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। প্রশাসনের মধ্যে যারা জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বর্তমান প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। আজকে যারা পদ পেয়েছেন তা আমাদের আন্দোলনের জন্য। আর আপনারা যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন তাহলে আপনাদের পদে থাকার প্রয়োজন নেই। আপনাদের মধ্যে যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার আপনাদেরই করতে হবে। শকুনদের খারাপ নজর চক্রান্ত শেষ হয়নি, আমরা যদি বেঁচে থাকি তাহলে আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও শহীদ পরিবারের পাশে থাকব। তাদের শরীরে বিন্দু পরিমাণ আঁচ লাগতেও দিব না।”
এই ফাউন্ডেশনের যাত্রাকে স্বাগত জানিয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ইউসুফ আলী বলেন, “শুধু আর্থিক সহযোগিতা নয় শহিদ পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হবে। আহতদেরও করা হবে সহযোগিতা। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।”