ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটের শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস ৩০ নভেম্বর দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘দুর্ঘটনার’ কবলে পড়ে। ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত’ বলে দাবি করেছে ত্রিপুরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার অফিস জানিয়েছে, সাধারণ দুর্ঘটনাকে ‘রং ছড়িয়ে’ মিথ্যাচার করছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম।
দুর্ঘটনার বিষয়টি ‘পরিকল্পিত’ কোনো হামলা নয়, সেটি স্পষ্ট করেছেন ওই বাসের চালক মো. আসাদুল হক। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এসে তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার সময় যাত্রীদের সঙ্গে কারো কোনো ধরনের বিবাদ তো দূর, কথাও হয়নি।
এদিকে, ত্রিপুরার পরিবহনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এটিকে ‘পরিকল্পিত’ দাবি করার পর ভারতীয় একাধিক পত্রিকায় এনিয়ে প্রকাশিত খবরে ঘটনাটি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে বর্ণনা করে।
বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসটি ৩০ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে আগরতলা থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর এলাকায় আসার পর একটি ট্রাক উল্টোদিক থেকে অতিক্রম করতে গেলে বাসটি ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে থামানোর চেষ্টা করে ও সড়কের একপাশে সরে পড়ে। এ সময় পেছনে থাকা পণ্যবাহী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বাসে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি বাসে আটকে যায়। সামান্য ব্যথা পান অটোরিকশার চালক। পরে একটি রেকার এসে বাস থেকে অটোরিকশাটিকে সরিয়ে দেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বাসটিতে ভারতীয়সহ ২৬ জন যাত্রী ছিল। এর মধ্যে ১৬ জন ভারতীয় নাগরিক।
শ্যামলী পরিবহনের চালক আসাদুল হক বলেন, ‘‘একটি ট্রাক উল্টোদিক থেকে অতিক্রম করতে গেলে আমি ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যাই। এ সময় পেছনে থাকা একটি অটোরিকশা বাসটিতে ধাক্কা খায়। এতে অটোরিকশাটি বাসের পেছনে আটকে যায়। দ্রুত নেমে একটি রেকার আনার ব্যবস্থা করে অটোরিকশাটি সরিয়ে নিই। বিষয়টি হাইওয়ে থানা পুলিশকেও অবহিত করা হয়। পুলিশ আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র দেখে চলে যেতে বলে। দুর্ঘটনায় বাসের কোনো ক্ষতি হয়নি কিংবা যাত্রীরা আঘাতপ্রাপ্ত হননি।’’
বাসচালকের ভাষ্য, ‘‘চলার পথে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এমনই একটি দুর্ঘটনা এটি। দুর্ঘটনাও একেবারে সাধারণ। এটি মোটেও পরিকল্পিত নয়।’’
জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন
জেলার খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট বায়জিদ মাহমুদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তারা ছুটে যান। দুর্ঘটনায় অটোরিকশাচালক মো. ইব্রাহিম সামান্য আহত হন। বাসের চালক ও অটোরিকশাচালকের মধ্যে সমঝোতা করে যে যার মত চলে যান।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন জানান, ত্রিপুরা রাজধানী আগরতলা থেকে আন্তঃদেশীর শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস চলাচল করে। দুপুরে সদর উপজেলার চান্দিয়ারা এলাকায় এই বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রং দেওয়া হচ্ছে, যা সত্য নয়। এটি নরমাল দুর্ঘটনা। এখানে সাম্প্রদায়িক গন্ধ খোঁজার কোনো সুযোগ নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরো জানান, এই সড়কটি ভারতীয় একটি কোম্পানি নির্মাণ কাজ করছে। এই সড়কের এক লেনে যান চলাচল করে। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়সময় ঘটে থাকে। দুর্ঘটনার পর তৎক্ষণাৎ শ্যামলী পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি ও ডেলিভারি ম্যান কর্তৃপক্ষের লোকজন কথা বলে নিষ্পত্তি করেন। বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়া এ দুর্ঘটনা নিয়ে রং ছড়াচ্ছেন। এটা স্রেফ দুর্ঘটনা, কোনো হামলা নয়।
এদিকে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খাদ্য, নাগরিক সরবরাহ, ভোক্তাবিষয়ক, পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ঘটনাটি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে বর্ণনা করেন। ওই দিন বিকেলে তার ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। তবে বাসটি যে বাংলাদেশের বিআরটিসি পরিবহনের, সেটি তিনি লেখায় উল্লেখ করেননি।
পরদিন ১ ডিসেম্বর (রবিবার) সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, ‘‘একটি সাধারণ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতেই সত্যটা জানার জন্য চালকসহ সংশ্লিষ্টদের এখানে আনা হয়েছে।