চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় আসামি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা ৩১ মিনিটের তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি তিন বছর সাত মাস অর্থাৎ ৪২ মাস কারাগারে ছিলেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বাবুল আক্তারের জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. ইব্রাহীম জানান, বাবুল আক্তারের জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার বিকেলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
জেল থেকে বের হয়ে তিনি পুলিশ প্রটেকশনে কারাগার ত্যাগ করেন। এ সময় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা কথা বলার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বাবুল আক্তারের হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন।
এর আগে, গত ১ ডিসেম্বর বিকেলে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত থেকে জামিনের বেইল বন্ড চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। বাবুল আক্তারকে হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের অন্তর্বর্তী জামিন স্থগিত চেয়ে মামলার বাদী শ্বশুর মোশাররফ হোসেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিলেন। গত ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিনের আদেশ দিয়েছিলেন।
ওই সময় আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘‘বাবুল আক্তার তিন বছর ৭ মাস ধরে কারাগারে আছেন, এই বিবেচনায় আদালত তাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছেন। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।’’
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। ১৮ আগস্ট বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে মামলায় স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একইদিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।
এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। গত বছরের ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।