সারা বাংলা

অফিস না করেও বেতন নিচ্ছেন গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার

দীর্ঘ তিনমাস ধরে অফিস না করেও বেতন ভাতা নিচ্ছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপ-রেজিস্ট্রার মো. নজরুল ইসলাম হীরা।

জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া মোড়ে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী হন মো. নজরুল ইসলাম হীরা। এরপর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি কিছুদিন ছুটি নেন। তবে ছুটি শেষ হলে তিনি নিজেকে অসুস্থ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছুটির আবেদন করলে তা মঞ্জুর করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, এ কর্মকর্তার নেতৃত্বে জুলাই ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করা হয়। মিছিল শেষে তার দেওয়া বক্তব্যে জুলাই ছাত্র আন্দোলনকারীদের জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে পিঠের চামড়া তুলে নিতে চেয়েছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে সরবরাহ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “তিনি আওয়ামী লীগ আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির এক মহা সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন। তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পিএসের ভালো সম্পর্ক থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগে হস্তক্ষেপ করতেন। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ পদক্ষেপ নিতে পারেনি।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে তিনি অফিস না করেও বেতন পাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমস্যার মূল হলো তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তার বিচার হওয়া প্রয়োজন।”

কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মো. নজরুল ইসলাম হীরা বলেন, “ঘোনাপাড়া হত্যাকাণ্ডের সময় আমি বাসায় ছিলাম। যা আমার ফোনের লোকেশন দেখলে প্রমাণ পাবেন। আমি অসুস্থ আছি, তার জন্য ছুটি নিয়েছি। এ জন্য আমি অফিসে আসছি না।”

প্রশাসন নতুন করে ছুটি না দেওয়ার পরও অফিসে না আসার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমি ছুটির আবেদন করেছি। প্রশাসন মিটিং করে সিদ্ধান্ত জানাবে বলেছে।”

তার অনুপস্থিতি ও অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান বলেন, “আমি নতুন এসেছি। তাই বিষয়গুলো ভালো করে জানি না। রবিবার অফিসে গিয়ে ভালো করে জেনে বলতে পারবো।”

তবে সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মুরাদ হোসেন বলেন, “তিনি ছুটি চেয়েছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি মঞ্জুর হয়নি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি দ্রুত মিটিং করে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”

তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ছুটি দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, “হত্যা মামলার আসামী হিসেবে তার বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ কি হবে, তা আমরা স্পষ্ট নয়। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি আইনি বিষয়গুলো কয়েকদিনের মধ্যে জানাবেন। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিব।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হলে কোনো পদে কেউ অনুপস্থিত থাকলে তা হয় না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তিনি না আসলে সে পদে অন্য কাউকে আনতে হবে।”