সারা বাংলা

ফরিদপুরে কমে যাচ্ছে খেজুর গুড়ের উৎপাদন

ফরিদপুরে প্রতিবছরই কমছে খেজুর গাছ। বাধ্য হয়ে পেশা বদলাচ্ছেন গাছিরা। নতুন করে এ পেশায় যুক্ত হচ্ছেন না কেউ। বর্তমানে যতোগুলো গাছ টিকে আছে তা থেকে রস সংগ্রেহের গাছি পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে উৎপাদন কমে গেছে জেলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের বলে জানিয়েছেন উৎপাদনকারীরা।

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) গুড় উৎপাদনকারীরা জানান, খেজুর রসের জোগান কম। কিছু ব্যবসায়ী রাজশাহী ও যশোর থেকে গাছি এনে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন করছেন। সেজন্য গাছিদের অনেক টাকা দিতে হচ্ছে। গুড় উৎপাদনের অন্যান্য খরচও বেড়েছে। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে গুড় উৎপাদন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের সুনীল দাসের বাড়িতে একসময় ছিল শতাধিক খেজুর গাছ। বর্তমানে ওই বাড়িতে একটি খেজুর গাছও নেই। সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সুনীল দাসের পরিবার আগে শীত মৌসুমে ১০ হাড়ি খেজুরের রস সংগ্রহ করতেন। সেই রস থেকে ১০ কেজির মতো খেজুর গুড় উৎপাদন হতো। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর বাকিটা বিক্রি করতেন তারা। বর্তমানে তারা গুড় উৎপাদন করছেন না।

সুনীল দাসের ছেলে সঞ্জয় দাস বলেন, ‍“গাছির সঙ্কট রয়েছে। খেজুর রস জ্বাল দেওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে খড়ের প্রয়োজন হয়। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা এবং তা থেকে গুড় তৈরি করা একটি শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া। গাছি না পাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে খেজুরের যেকটি গাছ ছিল তা কেটে ফেলা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন কাঠের গাছের চারা রোপণ করেছি।” 

সদর উপজেলার গঙ্গাবর্দী এলাকার কৃষি ইনস্টিটিউট এলাকায় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরির কাজে করেন গদাধর বিশ্বাস ও সুকান্ত। এখন তারা গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। 

গদাধর বিশ্বাস বলেন, “খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে ওই রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। গুড় তৈরি এবং বিক্রি করে অনেক কৃষক ও গাছিদের সংসার চলে। গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং গাছি না পাওয়ার কারণে গুড় উৎপাদনে অনেক কমে গেছে।”

ব্যবসায়ী এনামুল হাসান গিয়াস দীর্ঘদিন ধরে খেজুর গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, “খেজুর গাছের সংখ্যা কমে গেছে। গাছ থেকে রস সংগ্রহের গাছিও পাওয়া যাচ্ছে না। রাজশাহী ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গাছি এনে গাছ থেকে রস সংগ্রেহের পরে গুড় তৈরি করতে হচ্ছে। আমাদের তৈরি খেজুর গুড়ের চাহিদা সারা দেশে অনেক বেশি। রসের জোগান কম থাকায় গুড় উৎপাদন খুব বেশি পরিমাণে করা যাচ্ছে না।”

ফুরদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, “ফরিদপুরের খেজুর গুড়ের সুনাম সারা দেশে রয়েছে। দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গুড় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের খেজুর গাছ ও তালগাছ লাগানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।” 

বর্তমানে জেলায় কী পরিমাণ খেজুর গাছ রয়েছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তাদের কাছে এ মুহূর্তে খেজুর গাছের সংখ্যার সঠিক তথ্য নেই।